লাখপতির গল্প
অনেক কটুকথা শুনে সফল নার্গিস, মাসে বিক্রি প্রায় ২ লাখ
যখন নার্গিস পারভীন ব্যবসা শুরু করেন, তখন অনেক ‘কটুকথা’ শুনতে হয়েছে তাঁকে। বলেছেন আত্মীয়-স্বজনেরা। এখন ব্যবসায়ে সফল নার্গিস। প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় নার্গিস পারভীনের। জানান তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কুশল বিনিময়ের পর জানালেন ব্যস্ততার কথা। বলেন, ‘উদ্যোক্তা-জীবন নিয়েই আমি ব্যস্ত আছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম—ওহি বুটিক। আমি রাজশাহীতে বাস করি। আজ প্রায় ১৪ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে অফলাইনে কাজ করছি আর অনলাইনে প্রায় ১০ মাস যুক্ত আছি। মাশাআল্লাহ, ভালোই সাড়া পাচ্ছি। যাঁরা অফলাইনের কাস্টমার, বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করেছেন, অনলাইনে তাঁরা আমাকে পেয়ে অনেক খুশি। আমার বাবা চাকরিজীবী, তাই বিভিন্ন মহলে আমার পরিচিতি ছিল। আমার হাজব্যান্ডও চাকরিজীবী, সেই সুবাদে আমার কাস্টমার ভালো। যেহেতু চাকরিজীবী, মানে বদলির একটি বিষয় রয়েছে। তাই যে যেখানেই বদলি হোক না কেন, কেনাকাটার সময় আমাকেই নক করেছেন বা করছেন। আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। ২০২০ সালে করোনাকালে যখন উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) মাধ্যমে অনলাইনে আসলাম, তখন আমার অনেক কাস্টমার খুশি হলেন।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নার্গিস বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন ব্যবসা শুরু করি, তখন পরিবার থেকে তেমন একটা সাপোর্ট পাইনি। বরং আত্মীয়-স্বজনেরা অনেকই কটুকথা বলেছে। তবে নিজে খুব স্ট্রং ছিলাম। পরে দাদি, আমার মা ও হাজব্যান্ড; এদের সাপোর্ট পেয়েছিলাম। এখনও পেয়ে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও পাব বলে আশা রাখছি। তবে আজ উই-এ থাকার কারণে পরিবারসহ প্রতিবেশীরাও সাপোর্ট করছে।’
কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, বিক্রিই বা কী পরিমাণ? উত্তরে নার্গিস বলেন, ‘আমি থ্রি-পিস, টু-পিস, ওয়ান পিস, শাড়ি, বাচ্চাদের ড্রেস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে থাকি। ঈদকে সামনে রেখে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পণ্য রেডি করা হয়। তবে ঈদের ড্রেস এবং শাড়িগুলো বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে গর্জিয়াস করে তৈরি করা হয়। ঈদে রাজশাহী সিল্কের প্রচুর চাহিদা থাকে।’
উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর কোনো স্মৃতি? নার্গিস বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা-জীবনের সবচেয়ে মধুর স্মৃতি হলো, আমার ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে বাবা-মা, ছোট বোন, নিজের দুটো ছেলে অর্থাৎ ফ্যামিলির সবাইকে সামান্য কিছু হলেও দিতে পেরেছিলাম। আর আমার হাজব্যান্ডকে একটা স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলাম। এর চেয়ে মধুর স্মৃতি আর কিছুই হতে পারে না।’
এই কাজে কে কে সাহায্য করছেন? নার্গিস বলেন, ‘এই কাজে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন আমার হাজব্যান্ড। কেননা উনি সহযোগিতা না করলে আমি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। আমি এই উদ্যোক্তা-জীবন শুরু করার পর থেকে আজ প্রায় ১২ বছর ধরে রাজশাহীতে রয়েছি। আমার হাজব্যান্ড পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এবং তাঁর চাকরিতে ঘন ঘন বদলি থাকার কারণে তিনি তাঁর কর্মস্থলে একাই থেকেছেন। উনার ত্যাগের বিনিময়ে আমার এই উদ্যোক্তা-জীবন তৈরি হয়েছে।’
মাসে কী পরিমাণ বিক্রি হয়? উত্তরে নার্গিস বলেন, ‘উই-এ আমার সেল আপডেট তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা। মাসে প্রায় কমবেশি এক লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। আমার উদ্যোক্তা-জীবন প্রায় ১৩ বছর, তবে ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী ১০ বছর। আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মী, যাঁরা মাসিক বেতনে কর্মরত, তাঁরা হলেন ৮ জন আর ফিল্ডওয়ার্ক করেন প্রায় ৫০০ কর্মী।’
নার্গিসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ‘আমি রাজশাহীর মেয়ে হিসেবে সিল্ক পণ্যটাকে নতুনভাবে নতুন রূপে সবার মাঝে পরিচিত করে তুলতে চাই। আমি চাই, আমার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের যতটুকু সম্ভব কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে।’ নার্গিসের সেই স্বপ্ন পূরণ হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা।