এলপি গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণ অযৌক্তিক : লোয়াব

Looks like you've blocked notifications!

তিন মাস ধরে সিলিন্ডারে সরবরাহকৃত লিকুইড পেট্রলিয়াম (এলপি) গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের দক্ষতার অভাব আছে ও অযৌক্তিভাবে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলপিজি অপারেটরদের সংগঠন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘এলপি গ্যাসের মূল্যহার এবং এলপি গ্যাসশিল্প, বাজার ও ভোক্তাসাধারণের ওপর ঘোষিত মূল্যহারে প্রভাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি। তবে তাঁর এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গেল তিন মাস ধরে খুচরা পর্যায়ে সিলিন্ডারে সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। দেশে আমদানি করা এলপিজির বড় অংশ সৌদি আরব থেকে আসায়, তাদের দামকেই ভিত্তিমূল্য ধরে প্রতি মাসেই গ্রাহক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিইআরসি দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সব হিসাব-নিকাশ আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ লোয়াবের সভাপতি আজম জে চৌধুরীর।

আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘এই ব্যাপারে উনাদের (বিইআরসি) যোগ্যতা, দক্ষতা কোনো কিছুই নাই। সব কিছু আমরা দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় উনারা যখন প্রাইস ঠিক করল এমআরপি, ঠিক করার সময় এমন প্রাইস ঠিক করেছে যে আমাদের অ্যাজাম্পশন, আমাদের প্রাকটিক্যালি প্রাইস যেটা দিয়েছি, সেগুলো থেকে উনারা অনেক কম দিয়েছে। আমরা সরকার, সবাইকে বলার চেষ্টা করেছি যদি আপনারা কোনো উদ্যোগ না নেন সংশোধনীর জন্য, তাহলে বাজেটে এটার ইমপ্যাক্ট খুব খারাপ হতে পারে।’

লোয়াব সভাপতি বলেন, দুঃখের বিষয় বিইআরসি এমন  একটি মূল্য নির্ধারণ করেছে, যা বর্তমান বাস্তবমূল্যের চেয়ে অনেক কম। আমরা ডিস্ট্রিবিউটরদের খরচ দিয়েছি ৫০ টাকা, তারা সেই খরচ ধরেছে ২৪ টাকা। অন্যদিকে বিপিসির ডিস্ট্রিবিউটরদের খরচ ৫০ টাকা ধরা হয়েছে।

কিন্তু যে সূত্র মেনে গ্রাহক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে, সে বিষয়টি ঠিক করার সময় এলপিজি অপারেটরদের প্রতিনিধিও ছিলেন বলে এনটিভিকে টেলিফোনে জানিয়েছেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘শুনানিতে সবাই কমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে সৌদির দাম যখন ঘোষিত হয়, মাল আসতে আসতে সাত-আটদিন সময় লাগে। সুতরাং বাংলাদেশে প্রাইসটা নির্ধারণ হবে এম মাইনাস ওয়ান। অর্থাৎ প্রেজেন্ট মান্থে পূর্ববর্তী মান্থের দামটা ঘোষণা হবে। তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। তাঁর (আজম জে চৌধুরী) যে প্রাইসিং ফরমুলেশন আর আমাদের ফরমুলেশনে যদি দক্ষতার অভাব থাকে। তাহলে উনি কোনো আদালতে বা অন্য কোথাও চ্যালেঞ্জ করুক।’

বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই তা মানছে না, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে লোয়াব সভাপতি বলেন, অযৌক্তিভাবে মুনাফা করছে না এলপি খাত সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে লোয়াব নেতারা দাবি করেছেন, বিইআরসির কারণে ৩০ হাজার কোটি টাকার এলপিজি শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব লিয়াকত আলী খান, তানজিম চৌধুরী, জাকারিয়া জালাল, শামসুল হক প্রমুখ।

আজম জে চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরে আমরা ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস বিক্রি করছি। এর সুবিধা দেশের সব  মানুষ পাচ্ছে। বর্তমান এলপিজি খাতে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা জিডিপির প্রায় সাত শতাংশ। বাংলাদেশে এমন কোনো শিল্প আমি দেখিনি যা পাঁচ বছরে জিডিপির ৬/৭ শতাংশ হতে পারে। এলপিজি ইন্ডাস্ট্রির ফলে আমরা প্রতি বছর ৫০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় করছি। এই ৫০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস বর্তমানে প্রডাক্টিভ সেক্টরে ব্যবহার হচ্ছে, যা সার, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতে ব্যবহার করা হয়। যে কোনো দেশে এলপিজি সেক্টরের বৃদ্ধি হলে এর পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পবৃদ্ধি হয়। আমরা যেমূল্যে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছিলাম আমরা তাতে লোকসানে ছিলাম।