কামারপট্টিতে ব্যস্ততা বেড়েছে, বেচাকেনা এখনো জমেনি

Looks like you've blocked notifications!
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে বেচাকেনা এখনো জমেনি বলে জানিয়েছিন বিক্রেতারা। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

গৌরাঙ্গ কর্মকার হাপরের গনগনে আগুন থেকে লোহার পাত বের করে সামনে রাখছিলেন আর সেই তপ্ত লোহাতে একের পর এক হাতুড়ি চালাচ্ছিলেন সোবহান ও রাসেল। একসময় সেটি একটি ছুরির আকার নেয়। তারপর সেটি পাঠানো হয় পাশের সুজয় কর্মকারের কাছে। তিনিসহ আরও দুজন মেশিনে ধার দিয়ে তৈরি করেন চকচকে ছুরি। পরে সেটি বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখেন দোকানের সামনের সারিতে। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে তাঁরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এভাবেই কাজ করেন।

এই দৃশ্যটি আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টির। তখন বিকেল সাড়ে ৫টা। গৌরাঙ্গ কর্মকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অন্যবারের চেয়ে এবার বেচাবিক্রি কম। লকডাউনের মধ্যে মানুষজন আগে কিনতে আসতে পারেননি। আজ থেকে কিছু ক্রেতা আসতে শুরু করেছেন। আস্তেধীরে আরও আসবেন। তবে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। সামনের দিনের চিন্তায় বেশি বেশি অস্ত্র বানাচ্ছি।’

আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে। দিনরাত পরিশ্রম করে কর্মকারেরা চাপাতি, দা ও ছুরিসহ নানান সামগ্রী তৈরি করে দোকানে সাজাচ্ছেন। কিন্তু বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা। এদিকে বেশি দামে অখুশি ক্রেতা। তবে ঈদের আগে বিক্রি বাড়বে বলে ধারণা দোকানিদের।

কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে এসব জিনিস প্রস্তুতকারী মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাইকারি বিক্রি করেন; আবার কেউ কেউ নিজেদের দোকানে সাজিয়ে রেখে খুচরা বিক্রি করেন। কারো ব্যবসাই ভালো যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতাদের দাবি, অস্ত্রের দাম অনেক বেশি বলছেন বিক্রেতারা।

গৌরাঙ্গ কর্মকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই কারওয়ান বাজারে এই কাজ করেন। এখন তিনি দিনপ্রতি বেতন পান ৯০০ টাকা। সোবহান পান ৭৫০ টাকা আর রাসেল ৬০০ টাকা। হাপরের গরমের মধ্যে বসেই তাঁরা মূলত দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন। লোহাতে আঘাত করতে করতে তাঁদের হাতের তালু শক্ত হয়ে গেছে।

কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সোবহান বলেন, ‘দিনে তিনজনে মিলে ৪৫টার মতো চাপাতি, ৯০টার মতো ছুরি ও ৪০টার মতো জবাই করার বড় ছুরি তৈরি করা যায়। এখন কাজের চাপ অনেক। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত এই ব্যস্ততা থাকবে। কারণ, এখন আমরা যা তৈরি করছি সবই ঈদকে সামনে রেখেই।’

কামারপট্টিতে ‘মা-বাবার দোয়া’ নামের একটি দোকানের মালিক মো. বজলুর রহমান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এর আগে লকডাউনের কারণে দু-একজন চুরি-চামারি করে কিনতে এসেছেন। আজ থেকে বেশি বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে। আজ বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। রাত পর্যন্ত হয়তো আরও পাঁচ হাজার টাকা হবে। তবে, এ বিক্রি বেশি না। ঈদের তিন দিন আগে থেকে মূলত বেশি বিক্রি শুরু হয়। আমরা ওই সময়ের অপেক্ষায় আছি।’

অথচ, গত বছর ঈদের ছয়দিন আগে বজলুর রহমান বিকেল পর্যন্ত ১৭ হাজার টাকা বিক্রি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এই প্রতিবেদককে।

আমির হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত আট হাজার টাকা বিক্রি করেছি। গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি আসলেই কম। লকডাউনের কারণে মানুষ বেশি কোরবানি দিচ্ছেন না। আর এবার অল্প দামের অস্ত্র বেশি বিক্রি হচ্ছে। অথচ, এখন জিনিসপত্র তৈরি ও কর্মকারদের বেতন বাবদ আমার ১০ হাজার টাকা খরচ আছে।’

শহীদুল্লাহ আমিন নামের এক ক্রেতা কোরবানির জন্য রামদা, চাপাতি কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, এরা অনেক বেশি দাম রাখছে। ইস্পাতের রামদার কেজি খুব বেশি হলে ৫০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু, এরা রাখছে ৬০০ টাকা। একটা চাপাতির দাম বেশি হলে ৬০০ টাকা হওয়ার কথা কিন্তু রাখছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। ভাবছিলাম, এবার কম দামে কেনার চেষ্টা করব।’

দাম বেশি রাখার কথা বলেছেন শরিফুল নামের আরও এক ক্রেতা। তিনি বলেছেন, ঈদের এখনো অনেক বাকি থাকায় বেশি দাম চাচ্ছে। ঈদ যত কাছে আসবে তত দাম কমবে। আজ ঘুরে দেখে গেলাম, দুদিন পরে আসব।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই ধরনের লোহার চাপাতি তৈরি করছেন তাঁরা। কাঁচা লোহার চাপতির দাম কম। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। স্প্রিংয়ের বা পাকা লোহার লোহার দাম বেশি; ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। পশু জবাই করার ছুরি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। এই ছুরি ৬০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া চামড়া কাটার ছুরি ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বটি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে কুড়াল বিক্রি হচ্ছে।