গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ-অবরোধ

Looks like you've blocked notifications!
গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি

গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং কাজে যোগ দেওয়ার দাবিতে আজ বুধবার বিক্ষোভ করেছে।

এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটি অবরোধ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারেনি শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বেতনের ৬০ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গাছার সাইনবোর্ড এলাকার ব্যান্ডো ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ৬০ শতাংশ বেতনের পরিবর্তে শতভাগ বেতন পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আংশিক শ্রমিক দিয়ে সাময়িকভাবে স্বল্প পরিসরে কারখানা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হলেও সব শ্রমিককে কাজে নিয়োগের দাবি জানায় শ্রমিকরা। এ কারখানায় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করে। ওই দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা আজ সকাল থেকে কারখানার গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা ওই সরকারি নির্দেশ না মেনে বিক্ষোভ করতে থাকে। দুপুরের দিকে তারা পাশের ইন্টারস্টপ পোশাক কারখানার সামনে গিয়ে সেখানকার শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু সেই কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়নি।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা মহাসড়কে গাড়ি ভাংচুর করে এবং ঢিল ছুড়ে ইন্টারস্টপ কারখানার কাঁচ ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়।

একপর্যায়ে পুলিশ ২০ থেকে ২২টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় চার ঘণ্টা পর ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয় বলে জানান শিল্প পুলিশের কর্মকর্তা সুশান্ত সরকার।

এদিকে একই দাবিতে আজ গাছার তারগাছ এলাকায় অবস্থিত এ্যাবা ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এ কারখানায় আংশিক শ্রমিক দিয়ে স্বল্প পরিসরে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ছুটিকালীন ৬০ শতাংশ বেতনের পরিবর্তে শতভাগ বেতন প্রদান এবং সব শ্রমিককে কাজে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিল। দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার কিছু শ্রমিক কারখানায় কর্মরত অন্য শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণ করে নোটিশ টানিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

আজ বুধবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা কারখানা বন্ধ দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা কারখানা খুলে দেওয়াসহ শতভাগ বেতন পরিশোধের দাবিতে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে। এতে উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

অ্যাবা কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, কারখানা খোলার পর থেকে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তারপরও কর্তৃপক্ষ বলছে ৬০ ভাগ বেতন দেবে। ওই টাকায় ঘরভাড়া, খাওয়া দাওয়া কোনোকিছুই হবে না। এতে আরো অভাবের মধ্যে পড়তে হবে। তাই শ্রমিকদের দাবি, পুরো বেতন দিতে হবে।

অ্যাবা ফ্যাশন লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের এক নোটিশে উল্লেখ করেছেন, ‘৫ মে শ্রমিকরা সুনির্দিষ্ট কোনো বৈধ আইনগত দাবি না থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখছে এবং চালু থাকা অন্য সেকশনের কাজ জোরপূর্বক বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। তারা সবাইকে ভয়ভীতি প্রদান করে কারখানায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শ্রমিকরা উৎপাদন কাজে যোগদান করেনি। এ কার্যক্রম অবৈধ ধর্মঘটের শামিল। যার কারণে বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।’

শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান, আজ বুধবার দুপুরে পুলিশের সঙ্গে কারাখানা কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয় এবং আগামীকাল থেকে কারখানার খুলে দেওয়ার শর্তে শ্রমিকরা আন্দোলন ত্যাগ করে। আন্দোলনরতরা দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহাসড়কের উপর থেকে সরে গেলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ ছাড়া শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসলাম হোসেন জানান, মহানগরীর সাইনবোর্ড এলাকার গ্রিন সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বকেয়া বেতনের দাবিতে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ তৈরি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা আগামী ১১ মে ঘোষণার আশ্বাস দিলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে শিল্প পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম রেজা জানান, কালিয়াকৈরের মৌচাক সফিপুর এলাকার বে-ফুট কারখানার শ্রমিকরা চলতি মে মাসের ১৫ দিনেরসহ এপ্রিল মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আজ বেলা ১১টার দিকে কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বন্ধ ঘোষণা করা এ কারখানার তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক রয়েছে।

একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিক প্রতিনিধি ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের পাওনাদি আগামী ৯ মে পরিশোধের আশ্বাস দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা পর শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অপরদিকে, শিল্প পুলিশের পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম জানান, আংশিক শ্রমিক দিয়ে স্বল্পপরিসরে কাজ করানোর পরিবর্তে কারখানার সব শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করার দাবিতে আজ সকালে মহানগরীর লক্ষ্মীপুরা এলাকার মোহাম্মদীয়া ও স্টাইল ক্র্যাফ্ট নামের দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।