লাখপতির গল্প

ঘরে তৈরি খাবার বেচে সংসারের হাল ধরেছেন ফারহানা

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা ফারহানা খন্দকার। ছবি : সংগৃহীত

করোনা-পরিস্থিতির কারণে গেল বছর স্বামী চাকরি হারান। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি শুরু করেন অনলাইনে। এর পরেই ভাগ্য ফেরে ফারহানা খন্দকারের। এখন লাখপতি বনে গেছেন তিনি।

ফারহানার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নিউট্রি নেচার’। এ সেক্টরে কাজ করছেন মাত্র এক বছর। সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় ফারহানার। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবন ও লড়াইয়ের কথা।

কুশল জানতেই ফারহানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি। নিয়মিত থেকে যে সবার মনে জায়গা করে নেওয়া যায়, সেটা উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকেই জেনেছি। আমি হোম মেইড ফুড নিয়ে কাজ করছি। আচার, আমসত্ত্ব, পোলাও রোস্ট, ভর্তা-ভাত, কাচ্চি, হালুয়া, পিঠা এবং যেকোনো দেশি খাবার নিয়ে কাজ করার ফলে সারা দিন ব্যস্ততা লেগেই থাকে।’

কত দিন ধরে এ সেক্টরে কাজ করছেন আর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে ফারহানা বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নাম নিউট্রি নেচার (NUTRI NATURE)। আমার কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো সতেজ এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এক বছর ধরে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই সাড়া পাচ্ছি। কারণ, উই-তে অ্যাকটিভ থেকেছি। এখন অ্যাকটিভিটির ফল পাচ্ছি। গত বছর যাঁরা আমসত্ত্ব নিয়েছিলেন, তাঁদের এতই ভালো লেগেছে যে তাঁরা আবার এ বছর অর্ডার করেছেন। বিদেশ থেকেও অর্ডার এসেছে।’

সফল উদ্যোক্তা ফারহানা খন্দকার। ছবি : সংগৃহীত

ফারহানার কথায় বোঝা যাচ্ছে, উই-এর ফেসবুক গ্রুপ তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উই থেকেই আমার যাত্রা শুরু। উই হচ্ছে নারীর জীবনের চালিকাশক্তি। নারীর জীবনের আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে উই। আজ লাখ লাখ নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। উই থেকে নানা রকম ট্রেনিং এবং সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছেন আমাদের।’

ফারহানা আরও বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু উই থেকে। উই আমাকে পথ চলতে শিখিয়েছে। কোনো বিশেষণ দিয়ে বলতে পারব না উই আমার কাছে কী। উই-এর জন্যই বেঁচে থাকা। গত বছর আমার স্বামীর চাকরি চলে যায় বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব, চিন্তা করছিলাম। আমি ভালো রাঁধতে পারি, সবাই আমাকে বলত, সবাই অনেক আগে থেকেই উৎসাহ দিত কিছু করার জন্য। তার পরে উই-তে পোস্ট দিই আচার-আমসত্ত্বের জন্য। দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক অর্ডার পেয়েছি। এ সময় সেল না হলে জীবন চলা দুষ্কর হয়ে যেত।’

উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? ফারহানা বলেন, ‘এই জগৎ এক অন্য রকম ভালো লাগার, ভালোবাসার, আনন্দের। নিজে কিছু করতে পারছি, এটা আমার নিজের জন্য খুবই গর্বের বিষয়। আশপাশে আরও যারা উদ্যোক্তা রয়েছে, তাদের সাথে যে আত্মার বন্ধন তৈরি হয়েছে, সেটাও আমার জন্য খুবই আনন্দের।’

সফল উদ্যোক্তা ফারহানা খন্দকার। ছবি : সংগৃহীত

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? ফারহানা খন্দকার বলেন, ‘আমার স্বামী আমার অনুপ্রেরণা। আলহামদুলিল্লাহ। আমার ছেলেমেয়ে, স্বামী সবাই আমার কাজে সহযোগিতা করেন। ওদের ছাড়া আমার এই কাজ করা কখনোই সম্ভব হতো না। খাবার তৈরি থেকে শুরু করে ডেলিভারি, সব কিছুতেই আমার পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি। আত্মীয়রাও আমার উদ্যোগের অংশীদার হয়েছেন অনেক বার।’

এ পর্যন্ত ফারহানার দুই লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। এখনও বড় কোনো প্রতিষ্ঠান করেননি। কর্মী নেই। কিন্তু পরিবার তাঁকে সহযোগিতা করে। তাঁর আশা, একদিন বড় একটি প্রতিষ্ঠান হবে, যেখানে আরও নারীর কর্মসংস্থান করতে পারবেন। আরও মানুষের কাছে সতেজ স্বাস্থ্যকর খাবার পৌঁছে দিতে পারবেন। লেগে থাকলে যে সব সম্ভব, সেটা ফারহানা খন্দকার প্রমাণ করেছেন।