তিন দিন অবরোধ শেষে কাজে ফিরল পোশাকশ্রমিকরা

Looks like you've blocked notifications!
গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ। ছবি : এনটিভি

গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধের দাবিতে স্টাইল ক্র্যাফ্টস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তৃতীয় দিনেও কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। আজ শনিবার দুপুরের পর কাজে যোগ দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, জেলা শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কটিতে গত কয়েকদিন দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে জরুরি সেবার যানবাহনসহ হাসপাতালগামী রোগী ও স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসলাম হোসেন জানান, গাজীপুরের স্টাইল ক্র্যাফ্টস লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের অবশিষ্ট ৩৫ ভাগ করে ৭০ ভাগ বকেয়া বেতন এবং নভেম্বরের বেতন, ওভারটাইম ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ছুটির ভাতাসহ সব পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আসছিল। গতকাল শুক্রবার দিনভর তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ করে রাখে। একপর্যায়ে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের কয়েকদফা আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শ্রমিকদের নভেম্বরের ৫০ ভাগ বেতন আগামী ২৮ ডিসেম্বর ও বাকি ৫০ ভাগ ৭ জানুয়ারি, আর ডিসেম্বর মাসের বেতন ২৭ জানুয়ারি, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ করে ৭০ ভাগ বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনাদি জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিশোধের ঘোষণা দেন মালিক। শ্রমিকরা মালিকপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে।

শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, আজ সকালে কাজে যোগ দিতে শ্রমিকরা কারখানায় আসে। তাদের বেশিরভাগই কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দেয়। এ সময় কিছু শ্রমিক গেটে জড়ো হয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে অন্যদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেয়। তারা মালিকপক্ষের আগের দিনের (শুক্রবারের) সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা প্রত্যাখান করে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে সব পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় কাজে যোগ দেওয়া অন্য শ্রমিকরাসহ কয়েক কর্মচারি কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে সকাল সোয়া ৮টার দিকে তারা কারখানার পাশের ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কে অবস্থান নেয়। তারা ইট ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ও কারখানার মালিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা কয়েক দফা কথা বললেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থেকে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরে কাজে আগ্রহী এবং কারখানা থেকে ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের দুটি তালিকা তৈরির প্রস্তুতি নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে মুহূর্তেই রণে ভঙ্গ দিয়ে শ্রমিকরা দুপুর পৌনে ২টার দিকে আন্দোলন ফেলে আগের ঘোষণা মেনে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দেয়। ফলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর সড়কে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। 

শ্রমিকদের দাবি, তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামে।

এদিকে জিএমপির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধকালে রাতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে জিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজোয়ান আহমেদ, গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান ও শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধরসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় শুক্রবার থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।