পেঁয়াজভাণ্ডারে লাগামহীন দাম, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

Looks like you've blocked notifications!
পেঁয়াজের ভাণ্ডারখ্যাত পাবনায় লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। ছবি : এনটিভি

পেঁয়াজের ভাণ্ডারখ্যাত পাবনায় লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন, পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও পেঁয়াজের লাগামহীন দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বাজারের অস্থিরতার জন্য রাজধানীর পাইকার সিন্ডিকেটকে দায়ী করে তাদের নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আজ শুক্রবার পাবনার সদর উপজেলার আরিফপুর হাজিরহাট সকাল থেকেই ছিল পাইকার ও ক্রেতাদের ভিড়। দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এই উপজেলায় গত রোববারের হাটেই প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টাকায়। এর পরের দিন সোমবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর চার দিনের ব্যবধানে দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে গত বুধবার সেই হাজিরহাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়।

তবে, ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজ ছাড় হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমলেও তা সহনীয় নয় বলছে ক্রেতারা। আজ সকালে হাজিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে তিন হাজার টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।

হাজিরহাটের পাইকারি ব্যবসায়ী স্বপন জানান, গত মৌসুমের আকাশচুম্বী দামের কারণে এ বছর পাবনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। উত্তোলনকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকা, বাতাসের আর্দ্রতা সহনীয় থাকায় কৃষকপর্যায়ে সংরক্ষিত পেঁয়াজও নষ্ট হয়নি। এর পরও গত বুধবার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ১০০ টাকায়। আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে চাষিরা খুশি হলেও ক্ষুব্ধ পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা।

সুজানগর উপজেলার চর দুলাই গ্রামের রায়হান খন্দকার বলেন, ‘৪০/৫০ টাকার পেঁয়াজ তিন দিনেই হঠাৎ করে ১০০ টাকা হয়ে গেল। আমি মুড়িকাটা পেঁয়াজের বেসনের (বীজ) জন্য পেঁয়াজ কিনতে হাটে এসেছিলাম। কিন্তু দামের কারণে বেসন না কিনেই ফিরে যাচ্ছি।’

একই উপজেলার সাতবাড়িয়া উলাট গ্রামের বাসিন্দা পেঁয়াজচাষি সোলেমান প্রামাণিক বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ঢাকার পাইকারি বাজারে রেট ভালো যাচ্ছে। তাই পাবনায়ও দাম বেড়েছে।’

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। যার প্রভাবে দাম বেড়ে যায় পাবনার হাটে-বাজারে। ফলে উৎপাদক বা সরবরাহকারী পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে ঢাকার পাইকার সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

জেলা প্রশাসক জানান, পাবনায় চলতি মৌসুমে সাড়ে পাঁচ লাখ টন আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। বর্তমানে জেলায় কৃষকের ঘরে প্রায় ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। পেঁয়াজের তেমন কোনো সংকট নেই। গুজবের কারণে মানুষ অতিরিক্ত মাত্রায় পেঁয়াজ কেনায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।