প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

Looks like you've blocked notifications!
ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম (উপরে বামে), ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (উপরে ডানে), ড. হোসেন জিল্লুর রহমান (নীচে বামে) এবং ড. আতিউর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ সালের বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ বাজেট বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ একে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাজেট বলে উল্লেখ করছেন। বাজেট পরবর্তীতে আজ শুক্রবার অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পলিসি নয়। বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এর বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সক্ষমতা তৈরি না করে বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার দেশের জনগণকে যে সেবা দিবে তা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। তিনি বলেন, অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যয় কিভাবে বাড়বে, সেটা বাজেটে অনুপস্থিত। বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, বাজেটে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নতুন করে দরিদ্র হওয়া এবং শহুরে দরিদ্র জনগণের ওপর যথাযথ মনোযোগ না দিয়ে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার তাৎপর্য, অভিঘাত ও পরিণতি সম্পর্কে কোনো সংবেদনশীল তথ্য এই বাজেটে খুঁজে পাইনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে সমন্বিত কোনো পরিকল্পনাও নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, টিকা সংক্রান্ত ব্যয় এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা দেখছি না। দ্বিতীয়ত, করোনার কারণে দেশে দরিদ্র বেড়েছে। কর্মসংস্থান এবং মানুষের আয় কমেছে। বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। উপরন্তু দারিদ্র্য বিমোচনসহ এমন সব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার চেয়েও উচ্চাবিলাসী। সাম্প্রতিক হিসাবের কোনো কিছুই সেখানে নেই।

‘তৃতীয়ত, বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি খুব ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু যেসব খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগ সুবিধা পাবে সংগঠিত ও বৃহৎ শিল্প। কিন্তু মাঝারি বা ছোট শিল্পের জন্য সুনির্দিষ্ট খুব বেশি সুবিধা নেই। বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। যদিও কর ছাড়ের মাধ্যমে বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ কিছু বাড়ানো হয়েছে। চতুর্থত, সরকারি ব্যয় বাড়লে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা খুব বেশি উপকৃত হয়। কিন্তু এই ব্যয়ের গুণগতমান বাড়ানোর ব্যাপারে বাজেটে কোনো বক্তব্য নেই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সুদ মওকুফ এবং অর্থ সহায়তাসহ কোনো প্রস্তাব নেই’, যোগ করেন দেবপ্রিয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ বাজেট গরিব জনগণের জন্য সহায়ক হবে। কেননা, প্রস্তাবিত এ বাজেটে আরও বেশি মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।