ফের বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
দেশজুড়ে করোনা আতঙ্কে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি প্রতি ৮০ টাকায় উঠেছিল। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালালে তা ৩০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু আবারো পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দোকানিরা বলছেন, সামনে রোজা থাকায় পেঁয়াজের দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। রমজানকে সামনে রেখে অনেকে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনে রাখছেন।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
যাত্রাবাড়ীতে বাজার করতে আসা রাতুল রহমান এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এলাকায় প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ চাচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ করে কিনেছি।’ তিনি বলেন, ‘সামনে রমজান বিধায় বাসার জন্য বাজার করতে আসলাম। কিন্তু এখন দাম শুনেই আর কিনতে পারব না মনে হচ্ছে।’
রাতুল আরো বলেন, ‘পেশায় আমি একজন আইনজীবী। আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আয় রোজগার নেই। আগের কিছু জমানো টাকা দিয়ে চলছি। রমজান মাসে বাসায় তো ইফতার করতে হবে, আর পেঁয়াজ ছাড়া তো ইফতারের খাবারগুলো বানানো যাবে না। সরকারের আবারো অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। না হলে মধ্যবিত্তদের গলার কাটা হয়ে যাবে। আবারো পেঁয়াজ ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আলমগীর নামে রাজধানীর এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহেও পেঁয়াজ মান ভেদে পাল্লা (৫ কেজি) ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ‘রমজানের কারণে দাম বাড়ছে। আমরা মোকাম থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ আনছি।’
এছাড়া বাজারগুলোতে বিভিন্ন ডালের বিক্রি বেড়েছে। এর মধ্যে আবার কিছু ডালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অ্যাংকর, ছোলা ও মুগডালের দাম কিছুটা বেড়েছে। দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চাল ও মসুর ডালের দাম বাড়ে। অনেকে প্রয়োজনের অধিক বাসায় নিয়ে মজুদ করায় ডাল ও চালের সংকট কিছুটা বেড়েছে। মোকাম ও মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেন। তারা যে দামে কেনেন তার থেকে সামান্য লাভ রেখে মাল বিক্রি করে দেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অ্যাংকর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। আর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুগ ডালের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে।
কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সামনে রমজান। তাই অনেকে রমজানের কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে। আর রোজার সময় অ্যাংকর ও ছোলা দিয়ে ইফতার করে অনেকে। তাই চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে। অনেকে প্রয়োজনের বেশিও কিনছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সবজির দরদাম
এদিকে বাজারে দেখা গেছে সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। করলা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বরবটি ৪০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ২০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা ও পটল ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দরদাম
মাছের দাম অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। দেশি ও চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। ছোট রুই ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, পাংগাস ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, চাষের শিং ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা আর দেশি শিং ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ও টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির ডিম গত সপ্তাহের মতোই ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। দেশি হাসের ডিমের ডজন ১৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২০০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।