লাখপতির গল্প
মাসে লাখ টাকা বিক্রি ফিরোজার ‘সিলেটিয়ানা’য়
ছোটবেলায় মেধাবী শিক্ষার্থী বলে সুনাম ছিল সিলেটের ফিরোজা জান্নাতের। প্রাতিষ্ঠানিক রেজাল্টও বেশ ভালো ছিল। লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুব পরিশ্রম করতে পারেন স্বপ্ন পূরণে বদ্ধপরিকর ফিরোজা। এখন সফল উদ্যোক্তা তিনি। তাঁর অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সিলেটিয়ানা’। এ থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয় ফিরোজার।
গৃহিণী ফিরোজা জান্নাত। ইচ্ছে ছিল, ঘরও সামলাবেন, আবার উদ্যোক্তাও হবেন। যেই কথা, সেই কাজ। বাবা ও স্বামীর সহায়তায় গড়ে তুলেছেন ‘সিলেটিয়ানা’, যেখানে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী পণ্য, যেমন—মণিপুরী শাড়ি, ওড়না, তাঁতের থ্রি-পিস, রাজমা, বিন্নি চাল, বেতের পণ্য ইত্যাদি পাওয়া যায়। ব্যস, এক বছরের মাথায় লাখপতি ফিরোজা।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় উদ্যোক্তা ফিরোজা জান্নাতের। শোনান নিজের উদ্যোগ ও সফলতার গল্প। জানান, কাজ করছেন এক বছর। সাড়া পাচ্ছেন ভালো। দেশের সব জেলাতেই পণ্য পাঠানোসহ প্রবাসী ক্রেতাও পাচ্ছেন।
তো উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন কারা? এনটিভি অনলাইনকে ফিরোজা বলেন, ‘আমার জন্ম, বাসস্থান, পড়াশোনা—সবই সিলেটে। নিজের কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে, যখন সিলেটি পণ্যগুলো ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার পর তাঁদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পাই। শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের কাছ থেকে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) কাছ থেকে পেয়েছি। আমার পরিবার, ভাইবোন, বাবার কাছ থেকেও অনেক সাপোর্ট ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। প্রথম মূলধন আমার বাবাই দিয়েছিলেন। এমনকি আমার তিন বছর বয়সী কন্যা নুসাইবা সাদিক মানহাও অনেক কাজে সাহায্য করে মায়ের। পণ্যের ফটোগ্রাফিতে অংশ নিতে খুব আগ্রহী সে।
ফিরোজা বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্ট ছিল আমার কাজে, না হয় আজ আমার এত দূর আসা সম্ভব হতো না। কাজ শুরুর প্রথম দিকে যখন সোর্সিংয়ের জন্য দূর-দূরান্তে ছুটতে হতো, আমার হাজব্যান্ড সব সময় ছায়ার মতো পাশে থাকত। আমি যেহেতু গ্রামে থাকি, আমার সব পণ্য গ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শহরে গিয়ে ডেলিভারি করতে হয়। আমার হাজব্যান্ড আমাকে পূর্ণ সহায়তা করে এই কাজে। তা ছাড়া আমার ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজন সব সময় সাপোর্ট করে। প্রয়োজনীয় সবকিছু সিলেটিয়ানা থেকে কেনাকাটা করে।’
তবে ফিরোজার সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে উই-এর ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর ভাষ্যে, ‘নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম উই-এ জয়েন করেই আমি আমার উদ্যোগ শুরু করি। ভাবছিলাম একটা কিছু করব অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে। কিন্তু কীভাবে কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। উই থেকেই শিখেছি কীভাবে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে হয়। আমার মতো হাজারও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছে উই। উই প্রতিনিয়ত কাজ করছে উদ্যোক্তাদের স্কিল ডেভেলপ করার জন্য। উই-এ এসেই শিখেছি একটা উদ্যোগ কীভাবে শুরু করতে হয়, কীভাবে একে পরিচালনা করতে হয়, ছোট থেকে বড় করতে হয়। উই থেকে এই শিক্ষা নিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করা আমার সিলেটিয়ানা আজ এক বছরে অনেকটাই বড় হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। সিলেটিয়ানার সিংহভাগ ক্রেতাই হচ্ছেন উই-এর।’
কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? ফিরোজার উত্তর, ‘সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো দেশের সব জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়া এবং দেশের বাইরেও প্রচার করার লক্ষ্য নিয়ে সিলেটিয়ানার যাত্রা শুরু। প্রথমে রাজমা, বিন্নি চাল ও মণিপুরী পণ্য দিয়ে শুরু করলেও ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে সাতকড়া, সাতকড়ার আচার, বেতের পণ্য, দেশীয় শাড়ি, থ্রি-পিস ইত্যাদি অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে।’
ফিরোজা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে সিলেটিয়ানায়, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি আয় হয় অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে। ফিরোজার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, সিলেটের সব ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানরূপে সিলেটিয়ানাকে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও প্রতিষ্ঠিত করা। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানি করা।
উই-এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে অনেকে লাখপতি বনে গেছেন। ফিরোজা কি হতে পেরেছেন? এ উদ্যোক্তার উত্তর, ‘শুকরিয়া। লাখপতির খাতায় নাম লেখাতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। যে কেউ নাম লেখাতে পারেন এই খাতায়, তবে উদ্যোগ শুরুর আগে সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভালো করে জেনেশুনে, প্রস্তুতি নিয়ে, ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে পারলে সফলতা আসবেই।’