লাখপতির গল্প
‘মায়ের হেঁশেল’ দিয়ে লাখপতি রোহানা

রোহানা আক্তার রত্ন-র উদ্যোক্তা-জীবনের শুরুটা হয়েছিল মায়ের হোমমেড ফ্রোজেন রুটি-পরোটা এবং চালের ঝাল-মিষ্টি নাড়ু নিয়ে। এর পর থেকে নিজ ভূমি বাগেরহাটের বিখ্যাত দেশি চুই-ঝাল, রেডি টু কুক রাজহাঁস-পাতিহাঁস, চিংড়ি মাছ ও চিংড়ি মাছের মাথা এবং তাঁতের পপকর্ন খেস শাড়ি, দেশীয় থ্রি-পিস, শাল ও বিলুপ্তপ্রায় মাদুলি-গয়না সেট নিয়ে কাজ করছেন।
ফেসবুকে পেজ খুলে সেসব পণ্য বিক্রি করেন রোহানা। আর এরই মধ্যে লাখপতি বনে গেছেন তিনি। তাঁর অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—মায়ের হেঁশেল।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় রোহানা আক্তার রত্ন-র। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কেমন আছেন আর কী নিয়ে ব্যস্ত? জবাবে রোহানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। কোরবানি ঈদকে ঘিরে খুলনা-বাগেরহাটের চুই-ঝাল ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং পাশাপাশি দেশীয় তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস ও বিলুপ্তপ্রায় মাদুলি-গয়না নিয়ে কাজ করছি।’
কেমন সাড়া পাচ্ছেন? রোহানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই সাড়া পাচ্ছি। আমার সিগনেচার পণ্য দেশি চুই-ঝাল রেডি টু কুক পদ্ধতি শুরু করার পর সবচেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি এবং পাশাপাশি দেশীয় তাঁতের পপকর্ন খেস শাড়ি ও বিলুপ্তপ্রায় মাদুলি-গয়না সেট আমার উদ্যোগে যুক্ত করার পর অনেক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আলহামদুলিল্লাহ, গত এক বছরে অনলাইনে ৮৬ কেজির বেশি দেশীয় চুই-ঝাল, পাঁচ পিস পপকর্ন খেস শাড়ি এবং দুই সেট মাদুলি-গয়না সেল করেছি।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? রোহানার জবাব, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার বাবা-মা এবং আমার শ্বশুর-শাশুড়ি; আমার হ্যাসব্যান্ড ও আমার তিন বছর বয়সী ছেলে—সবাই আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ প্রদান করছে।’
বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে বিক্রি কেমন বাড়ে? রোহানা বলেন, ‘বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে কেনাকাটা জমে ওঠে, তবে এখন লকডাউনকে কেন্দ্র করে অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। আমিও এবার কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে দেশি চুই-ঝাল ও তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস এবং মাদুলি-গয়না সেট নিয়ে প্রচার করছি।’
উদ্যোক্তা হওয়ার পরে মধুর স্মৃতি জানতে চাইলে রোহানা বলেন, ‘মধুর স্মৃতির কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলব, আমাদের উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে আমার উদ্যোগের কাস্টমার হিসেবে পেয়েছি, তাই খুশি আমার ছেলে এবং হাসব্যান্ডকে নিজেই আপুর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম ডেলিভারি দিতে; কিন্তু নিশা আপুর সঙ্গে দেখা হয়নি, আপু একটা মিটিংয়ে ছিলেন। আমার উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত আল্লাহ তা-আলার রহমত এবং আমার পরিবার ও উই গ্রুপের সবার উৎসাহ-অনুপ্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

উই-এর ফেসবুক গ্রুপ রোহানার উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার এক বড় আপু মরিয়ম মৌরি উই গ্রুপে আমাকে সদস্য হতে ইনভাইট পাঠায়। আমি ২০২০ সালের ২১ মার্চ উই গ্রুপের সদস্য হই, কিন্তু উই গ্রুপের মানে বুঝতে পারিনি তখন। প্রতিদিন সবার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প পড়ে ধারণা নিয়েছিলাম উই গ্রুপ দেশীয় পণ্যের একমাত্র ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম; এর পর গত বছর লকডাউনের সময় যখন আমার বাবার শুটিং বন্ধ ছিল, আশপাশের পরিস্থিতি তেমন ভালো ছিল না, বাবা-মা বাসায় বসে ডিপ্রেশনে পড়ে যাবে—এই ভাবনা থেকে আমার মাকে বললাম, আম্মু চলো উই গ্রুপে তোমার ফ্রোজেন রুটি ও পরোটা এবং চালের ঝাল-মিষ্টি নাড়ু নিয়ে পোস্ট দিই। আম্মু রাজি হলো। তার পর থেকে উই গ্রুপে অ্যাকটিভ থাকার সুফল পেয়েছি, প্রথম পোস্ট থেকেই অর্ডার আসা শুরু করেছিল।’
বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনি হতে পেরেছেন? রোহানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি লাখপতি হয়েছি। লাখপতি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের বলতে চাই, কারও লাখপতি হওয়ার সেল আপডেট দেখে হতাশ না হয়ে উই গ্রুপে নিজের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন। দেখবেন, ইনশা আল্লাহ আপনি সফল হবেন।’
রোহানা ২০১৫-২০১৬ সেশনের সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁর স্বপ্ন, বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী একটা ছোট মাছের ঘের নিয়ে বাবার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে চুই-ঝাল চাষ করা। রোহানার সে স্বপ্ন পূরণ হোক, এমন প্রত্যাশা সবার।