লাখপতির গল্প
মা ও স্বামীর সহযোগিতায় এক বছরে লাখপতি রাবেয়া
বিভিন্ন দেশীয় পোশাক থ্রি-পিস, শাড়ি, শীতের শাল নিয়ে কাজ করেন রাবেয়া আক্তার। মাত্র এক বছর হলো অনলাইনে ব্যবসা করছেন। মা ও স্বামীর সহযোগিতায় এরই মধ্যে লাখপতি বনে গেছেন তিনি। রাবেয়ার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—মিরহা’স ফ্যাশন গ্যালারি।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় রাবেয়া আক্তারের। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কুশল জানতেই তাঁর জবাব, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। একজন উদ্যোক্তার ব্যস্ততা তাঁর কাজকে ঘিরে। তাই কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকা হয়।’
রাবেয়া আক্তার জানান, তিনি কাজ করছেন এক বছর হলো। খুব অল্প সময় হলেও অনলাইন-অফলাইন মিলে ভালো সাড়া পাচ্ছেন, যেটা তাঁর কল্পনাতীত ছিল। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) জন্য। তিনি মনে করেন, উই-এর লাখ লাখ উদ্যোক্তার মাঝে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন, এটি তাঁর জন্য বড় সফলতা।
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? রাবেয়া বলেন, ‘রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ায় মেয়ে হয়ে কাজ করার সুযোগটা কমই বলতে গেলে। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে আমি আজ যতটুকু পথ আসতে পেরেছি, এখন পরিবার থেকে মোটামুটি ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমার স্বামী, আমার মা আমাকে অনেক সাহায্য করেন। পণ্য কালেকশনে গেলে আমি একা পেরে উঠি না, সে ক্ষেত্রে কখনও আমার মা, কখনও আমার স্বামী যথেষ্ট সাহায্য করেন।’
রাবেয়া জানান, শুধু উই-এর ফেসবুক গ্রুপ থেকে তাঁর পণ্য বিক্রি হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার। উই-এর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এত বড় পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় হাত উই-এর। ঘরে বসে কাজ করার ইচ্ছেটা আগে থেকে থাকলেও পথ চলা শিখেছি উই-এর হাত ধরে। আজ আমি একজন উদ্যোক্তা, এই পরিচয় আমাকে উই দিয়েছে।’
উদ্যোক্তা হওয়ার পরে মধুর কোনও স্মৃতি? রাবেয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অনেক আগ্রহী ছিলাম, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় পরিবারের সাপোর্ট না থাকায় পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি। আমার উদ্যোক্তা-জীবনের সবচেয়ে মধুর আর সম্মানের স্মৃতি হচ্ছে, আমার উদ্যোগের টাকা দিয়ে আমি আবার পড়াশোনা করছি। আগে থেকে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম, তবে তা অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। এখন তা পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে উই।’
রাবেয়া আরও বলেন, ‘আমি বর্তমানে পড়াশোনাসহ নিজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। আর এই কাজে অনেকটা সাহায্য করেছে কম্পিউটারবিষয়ক এবং সোশ্যাল মিডিয়া জ্ঞান; যেমন—কম্পিউটার অপারেটিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ফেসবুকিং, পেজ ম্যানেজমেন্ট, গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।’
উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘যাঁর পরিচয় কিছু দিন আগেও শুধু গৃহিণী ছিল, তাঁকে আজ সবাই একজন নারী উদ্যোক্তা পরিচয়ে জানে; এটা আমার জন্য খুবই গর্বের। আমার কাজের অনুপ্রেরণা আমাদের প্রিয় নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং উই-এর সেসব নারী উদ্যোক্তা আপু, যাঁদের সফলতার গল্পগুলো আমাকে খুব তাড়া করত নিজের জন্য কিছু করতে।’
লাখপতি হতে অন্যদের কী করা উচিত বলে মনে করেন? রাবেয়ার জবাব, ‘আমি মনে করি লাখপতি হওয়ার জন্য নয়, নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য মন দিয়ে, সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে মানুষের মন জয় করতে পারলে লাখপতি হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়।’
আগামী দিনের পরিকল্পনা জানতে চাইলে রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘আমার উদ্যোগ নিয়ে পরিকল্পনা—আমি একজন সাধারণ নারী থেকে একজন নারী উদ্যোক্তার পরিচয় লাভ করেছি, এটা দেখে যেন আরও নারী অনুপ্রাণিত হয়—এমনভাবে কাজ করে যেতে চাই।’