মে দিবসেও কাজ, অনন্ত জলিলের কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
আজ শুক্রবার মহান মে দিবসেও কাজে বাধ্য করায় অভিনেতা অনন্ত জলিলের কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ। ছবি : এনটিভি

একে তো মহান মে দিবস, তার উপর শুক্রবার ছুটির দিনেও শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে সাভারের একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মে দিবসেও কাজ করার নির্দেশ জারি করায় কয়েক হাজার শ্রমিক কারখানা ছেড়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কারখানাটির মালিক অভিনেতা অনন্ত জলিল।  

শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে এ সময় অচল হয়ে পড়ে হেমায়েতপুরের ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়ক। দীর্ঘসময় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে লাঠিসোটা হাতে আরেক দল শ্রমিক এসে ধাওয়া করে তাদের। দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। লাঞ্ছিত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  

আজ শুক্রবার সকালে সাভারের হেমায়েতপুরে অভিনেতা অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন এজেআই গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এ ঘটনা ঘটে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘মে দিবসে কাজ না করলে তিন দিনের হাজিরা কাটা হবে‘- এমন ভয় দেখিয়ে সরকারি ছুটির দিনেও তাদের কারখানায় আসতে বাধ্য করে মালিকপক্ষ। কাজে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানালে বেসরকারি একটি টেলিভিনের সাংবাদিক সেখানে গেলে শ্রমিকরা কর্মস্থল ছেড়ে একযোগে বের হয়ে আসে সড়কে।

এ সময় শ্রমিকরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলে লাঠি হাতে তেড়ে আসেন আরেকদল শ্রমিক। দুদল শ্রমিকের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। তাদের ধাওয়ার মুখে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন।

বিক্ষোভরত একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেন, শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানা খোলার আগেই গত মাসের ২১ তারিখে অভিনেতা অন্তত জলিলের হেমায়েতপুর এলাকার এজেআই গ্রুপের কারখানা খুলে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের স্বাস্থ্যকর মাস্কও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার মহান মে দিবসেও কাজে বাধ্য করায় অভিনেতা অনন্ত জলিলের কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ। ছবি : এনটিভি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এখানে সাবান নয়, হুইল পাউডারের পানি দিয়ে হাত ধোয়ানো হয়। বাইরে থেকে কেউ যাতে বুঝতে না পারে সেজন্যে পেছনের ফটক দিয়ে শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকানো হয়।’

কারখানার মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের সামনেই এমন অভিযোগ করছিলেন শ্রমিকরা।

মে দিবসেও কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিল্প পুলিশের সাভার জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আরিফ। আজ দুপুরে তিনি বলেন, ‘কেবল এজেআই গ্রুপই নয়, এদিন এই শিল্পাঞ্চলে আরো পাঁচটি কারখানা খোলা রাখা হয়েছে।’

এজেআই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিনেতা অনন্ত জলিলের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে তাঁর পক্ষে গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা জাহিদুল হাসান মীর এসে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) তৈরির জন্য শ্রমিকদের কারখানায় আনা হয়েছিল। শ্রমিকরা কাজ করতে ইচ্ছুক নন এটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছেন।’

জাহিদুল হাসান মীর যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখনই শ্রমিকরা সবাই মিলে চিৎকার করে বলছিলেন, সবই মিথ্যা। ভেতরে যান। দেখেন আমাদের দিয়ে পিপিই নয়, গেঞ্জি ও প্যান্ট বানানো হচ্ছিল।

বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্যে কারখানার ভেতরে যেতে চাইলেও পরে জাহিদুল হাসান আর কথা বাড়াননি।

খবর পেয়ে ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে ক্রমাগত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সাভার ও আশুলিয়ায় সব কারখানা বন্ধের সুপারিশ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে শ্রমিকদের জটলা এড়াতে সাভারে বাতিল করা হয়েছে মে দিবসের সব কর্মসূচি।