লাখপতির গল্প
রান্নার কোর্স করে স্বাবলম্বী দীবা, মাসে বিক্রি ৪০ হাজার টাকা
পেশা হিসেবে নেওয়ার আগে রান্নার ওপর বিভিন্ন কোর্স করেছেন ফারাহ ইউসুফ দীবা। আর সরকার অনুমোদিত শেফ লেভেল ১ ও ৪ নম্বর পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেটও অর্জন করেছেন। অনলাইনে সেই দীবা ঘরে তৈরি খাবার বেচে লাখপতি বনে গেছেন।
দীবার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নাম—দীবা’স ডেলিকেসি। এ সেক্টরে কাজ করছেন প্রায় তিন বছর। সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় দীবার। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। বলেন, হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ করে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছেন। করোনাকালে হোমমেড ফুডের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুশল জানতেই ফারাহ ইউসুফ দীবা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আল্লাহর রহমতে উদ্যোক্তা-জীবন নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটছে।’
কত দিন ধরে এ সেক্টরে কাজ করছেন আর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে দীবা বলেন, ‘আমার উদ্যোগ ঘরে তৈরি খাবার নিয়ে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে যাত্রা শুরু করি। নানা রকম খাবার নিয়ে কাজ করি আমি। রোজকার ডাল-ভাত, মাছ-মাংস যেমন পাওয়া যায় আমার কাছে, তেমনই দাওয়াতের খাবার যেমন পোলাও, রোস্ট, তেহারি, খিচুড়ি এগুলোও পাওয়া যায়। অন্যদিকে কেক, চকলেট, নানা রকম ডেজার্ট, আচার ও ফ্রোজেন ফুড নিয়েও কাজ করি আমি।’
উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? দীবার ভাষ্য, ‘প্রথম দিকে উদ্যোক্তা হয়ে অনেক রকম নেগেটিভ কথা শুনেছি। যখন সফলতার মুখ দেখেছি, তখন থেকে অবশ্য আর শুনিনি।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? ফারাহ ইউসুফ দীবা বলেন, ‘পরিবারের সম্পূর্ণ সাপোর্ট না পেলে উদ্যোক্তা হওয়া হতো না আমার।’
উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) ফেসবুক গ্রুপ দীবার উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উই-এ এসে আমার উদ্যোক্তা-জীবনের নতুন জন্ম হয়েছে। আমি উই-এ যুক্ত হয়েছি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। গত বছর করোনাকালে চারদিকে যখন প্রচণ্ড আতঙ্ক এবং ঘরে ঘরে চাকরি হারানোর সংবাদ, তখন উই-এর কল্যাণে আমি অর্ডারের চাপে দিশেহারা। ওই সময়ের সমস্ত অর্ডার ছিল উই থেকে। উই-এ এসে অন্যদের জীবন-সংগ্রামের কথা শুনে সব সময় মনে হয়, আমি কত ভালো আছি। উই-এ এসে জীবনকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করতে শিখেছি। যখনই হতাশা গ্রাস করতে চায়, উই-এ এসে মানুষের জীবন-সংগ্রামের ঘটনাগুলো পড়ি আর নিজেকে বুস্টআপ করি।’
পণ্যের মান কীভাবে রক্ষা করেন? দীবা বলেন, ‘পণ্যের মান রক্ষা করার জন্য সবজি কাটার আগে ধোয়া, সঠিক তাপমাত্রায় রান্না ইত্যাদি বিষয়গুলা জানা খুব জরুরি। এগুলো মেইনটেইন করার জন্য আমি নিজে রান্না করি।’
মাসে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়? ফারাহ ইউসুফ দীবা বলেন, ‘গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো। এর বেশি আসলে আমাকে অর্ডার ফিরিয়ে দিতে হয়। কারণ, আমার কিচেন এখনও খুব ছোট। আয় দিয়ে প্রয়োজন মিটে যায়। পারমানেন্ট সাহায্যের লোক আমার এখনও নেই। ওয়ান হ্যান্ডে চলছে এখনও বলা যায়।’
বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনি হতে পেরেছেন? উত্তরে দীবা বলেন, ‘জি, আমিও উই থেকে লাখপতি হয়েছি গত বছর লকডাউনের সময়।’
দীবার পরামর্শ, যারা চাকরি পাচ্ছেন না, হতাশায় না ডুবে ছোট পরিসরে হলেও নিজের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। সবাই যে খাবার নিয়ে কাজ করতে পারবেন এমন নয়, যার যে বিষয়ে আগ্রহ সেটা নিয়ে একটু মার্কেট অ্যানালাইসিস করে কাজ শুরু করা দরকার। এ উদ্যোক্তার আশা, তাঁর দীবা’স ডেলিকেসি অচিরেই বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। মানুষ একনামে চিনবে। দীবার স্বপ্ন পূরণ হোক, এ কামনা সবার।