লাখপতির গল্প

লক্ষ্যে অটল থাকলে দেরিতে হলেও সাফল্য আসবে : মিতা চাকমা

Looks like you've blocked notifications!
দেয়াল হোম ডেকোরের কর্ণধার, সফল উদ্যোক্তা মিতা চাকমা। ছবি : সংগৃহীত

একটি সুন্দর গোছানো ঘর মানসিক প্রশান্তি দেয়। আর আমরা এ-ও জানি, ঘর মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি, সেটা আবাসস্থল হোক বা কর্মক্ষেত্র। ঘর সাজাতে প্রয়োজন সুন্দর আসবাবপত্র। খেয়াল রাখতে হয় রং, সাজ, আলোকসজ্জার দিকেও। সাধ্যের মধ্যে না থাকায় অনেকে আসবাবপত্রের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন না। দামে কম, মানে খাঁটি—এমন সব ঘর সাজানোর আসবাব নিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছে ‘দেয়াল হোম ডেকোর’। এই হোম ডেকর সাইটে ইনডোর ট্রি স্ট্যান্ড, শোপিস স্ট্যান্ড, কি-রিং হ্যাঙ্গার, ওভেন স্ট্যান্ড ইত্যাদি বিক্রি করা হয়, যা মিলছে সুলভ মূল্যে।

‘দেয়াল হোম ডেকোর’ উদ্যোক্তা মিতা চাকমা, যিনি একাধারে গৃহিণী, চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তা। সব সামলিয়ে কেমন চলছে উদ্যোক্তা-জীবন, তার বিস্তারিত এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন মিতা চাকমা।

মিতা চাকমা বলেন, ‘একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা হতে পেরে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করি। আমি শুরুতে অনেকগুলো আইডিয়া নিয়ে ভেবেছিলাম। আমার হাসব্যান্ডের একটি ইন্টেরিয়র ফার্ম আছে। তার পরামর্শ নিয়ে আমি ঘরের ছোট আসবাব নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। অনলাইনে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের কাজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম—উই) ফেসবুক গ্রুপটি আমার চোখে পড়ে। ছোট থেকে বড়, সব উদ্যোক্তার কাজ দেখে আমি দেয়াল নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলি। এভাবে শুরু হয় আমার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা।’

তো, পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? মিতা জানালেন, তাঁর পরিবারের সবাই কাজে সমর্থন দিয়েছে। তিনি নিজের কাজের জন্য সংসারের কাজে হাত দেওয়ার তেমন সময় পান না। তবু তাঁর পরিবার কাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ব্যবসা ভালো হলে তাঁর পরিবার সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। এগিয়ে যাওয়ার পথে পরিবার তাঁকে সব সময় অনুপ্রেরণা জোগায়।

মিতা চাকমা জানান, ঘরকে সুন্দর করে তোলা যায়, এমন কিছু ছোট ছোট প্রোডাক্ট নিয়ে তিনি কাজ করেন। তবে এটা মাথায় রাখেন, যেন গুণগত মান সবচেয়ে ভালো হয়। আর তিনি যেসব প্রোডাক্ট বিক্রি করেন, তা সবার সাধ্যের মধ্যে যাতে থাকে, সেটা খেয়াল রাখেন।

মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করেন না মিতা চাকমা। ফলে অনেক ঝক্কির মধ্যে যেতে হয় তাঁকে। বললেন, ‘প্রায়ই কিছু ক্রেতা আমার চাওয়া দামের চেয়ে অনেক কম দামে প্রোডাক্ট চাওয়ায় বিক্রি করতে পারি না। কারণ, আমি বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে সবচেয়ে ভালো ম্যাটেরিয়ালে তৈরি পণ্য বিক্রি করি। প্রোডাক্ট নিজের ফ্যাক্টরিতে বানাই বলে আমার খরচ কম পড়ে, অল্প লাভে বিক্রি করি। তার পরও আমি দামে ছাড় দিই মাঝে মাঝে, তবে মানে ছাড় দেওয়া আমার নীতিবিরোধী।’

ক্রেতা কেন আপনার পণ্য কিনবে? এ প্রশ্নের উত্তরে মিতা বলেন, ‘বর্তমানে সবাই নতুনত্বকে প্রাধান্য দেয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী ইউনিক ডিজাইন নিয়ে আসতে। আর ঘর সাজাতে কে না পছন্দ করে। আমার পণ্যগুলো ঘরের দ্বিগুণ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আমার প্রতিটি পণ্য আধুনিক ধারার ডিজাইনকৃত, যা আমার মতে সবার কাছে আকর্ষণীয় লাগবে।’

উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল, আর মধুর স্মৃতি? মিতা চাকমার উত্তর, ‘মধুর স্মৃতি বলতে আমি উই-এর নিশা আপু আর উই পারিবারের আরো অনেক প্রিয় মুখ, যাঁরা আছেন, যাঁদের অনুপ্রেরণায় আমার এ উদ্যোগ; সবার সঙ্গে এত দ্রুত সাক্ষাৎ হবে ভাবতেই পারিনি। এটাই আমার জন্য এখন সবচেয়ে মধুর স্মৃতি ও বড় পাওয়া বলে মনে করি। আগে থেকে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম, তবে তা অপূর্ণ ছিল। এখন তা পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে উই। এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই নিশা আপু আর রাজিব স্যারকে। এরপর আমার স্বামী ও তার পরিবার। যে জন্য আমি আমার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে পারছি।’

এই কাজে কে কে আপনাকে সাহায্য করে? মিতা চাকমা বলেন, ‘প্রধানত আমার স্বামী। তারপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। যেমন—শাশুড়ি, দেবর। এ ছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানে এখন ছয় জন কর্মী কাজ করেন। এর বাইরেও আরো কয়েক জন কাজ করেন, তবে রেগুলার নয়। কাজের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেন।’

মিতা চাকমা মনে করেন, ‘আমরা নারী, আমরা পারি’—এ কথার মধ্যে অনেক বড় শক্তি আছে। এটি সাহস জোগায়। বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা হতে পেরে অনেক গর্ববোধ করি। আর আমি মনে করি, নারীরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই।’

উই সম্পর্কে মিতা চাকমার মূল্যায়ন, ‘উই নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশের জন্য দেশের একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। সফল উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বে অনেকে গড়ে তুলেছে নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসা। ঘরে বসেই অনেকে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছে স্বপ্ন পূরণের অগ্রযাত্রা। উই-এর মতো একটি প্ল্যাটফর্ম নারী উদ্যোক্তাকে নিজের কাজকে বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে।’

মিতা চাকমা আরো বলেন, ‘আমার ব্যবসার বিস্তার ও সুপরিচিতি গঠনে উই ফেসবুক গ্রুপ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। আমার কাজকে কীভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে হবে, কীভাবে অনলাইনে মার্কেটিং করতে হবে, কীভাবে আমার পণ্যের মান উন্নত করা যাবে, এসব আমি উই থেকেই শিখেছি। তা ছাড়া উই-এর বড় ভাইয়া ও বড় আপুরা আমার মতো উদ্যোক্তাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করায় অনেক উপকৃত হয়েছি। উই আমার কাজকে সম্মানজনক ও লাভজনক মঞ্চে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।’

মিতা চাকমা পড়াশোনা করেছেন প্রকৌশলবিদ্যায়। তবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাস্টমার কেয়ার বিভাগে কাজ করছেন। চাকরি আর ব্যবসা সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মিতা বলেন, ‘আমি যে সেক্টরে জব করি, সেটা মানুষের সেবামূলক কাজ। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা আর ভালো লাগার কাজ। মনের মধ্যে তৃপ্তি কাজ করে।’

মিতা চাকমার পরামর্শ, চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। অনেকে ব্যবসার ঝুঁকি নিতে ভয় পান। চাকরির জন্য ছোটাছুটি করেন। তবে মিতা মনে করেন, ঝুঁকি ছাড়া উন্নতি অসম্ভব। এই নীতি মেনে সবার সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আপনি যদি একটা লক্ষ্যে অটল থাকেন, দেরিতে হলেও সফলতা আসবে। এ মন্ত্র বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মিতা।