লাখপতির গল্প

লাখ টাকার পণ্য বেচতে খুব কষ্ট করতে হয় না : আরিফা

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা আরিফা খাতুন। ছবি : সংগৃহীত

 

দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা ময়মনসিংহের মেয়ে আরিফা খাতুন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম আফাফ ক্রিয়েশনস। অনলাইনে শিশুদের পোশাক বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৮ সালে নিজের হাতখরচার ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু হয় উদ্যোগ আর এখন লাখপতি তিনি।

সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অংশ নেন আরিফা খাতুন। জানান তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের সাফল্যের গল্প।

উদ্যোগ সম্পর্কে আরিফা খাতুন বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহ সদর থেকে কাজ করছি। আমার উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৮ সালে। যখন বিসিএসের প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, তখন নিজের হাতখরচের টাকা থেকে ৫০০ টাকায় শুরু করি উদ্যোগ। আমার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু হয় নিজের ডিজাইনে বাচ্চাদের ড্রেস দিয়ে। তখন অনলাইনে বাচ্চাদের ড্রেস তেমন পাওয়া যেত না, ফলে অনেক সাড়া পেতে শুরু করি। এরপর নিজের উদ্যোগে আরও কয়েক ধাপে বিনিয়োগ শুরু করি। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে বিজনেসের কাজ বন্ধ রাখি প্রেগন্যান্সির জন্য। এরপর আবার কাজ শুরু করি অক্টোবরে, মাত্র দেড় মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে। এরপর থেকে শুরু হয় আসল যুদ্ধ। নিজেকে তৈরি করার লড়াই, এমন সময় উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) কল্যাণে ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যারকে পাই। আমি স্যারকে ফলো করা শুরু করি এবং মেন্টর হিসেবে স্যারের কথা মেনে পথচলা শুরু করি।’

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? আরিফা খাতুন বলেন, ‘পরিবার থেকে আমি সম্পূর্ণ সাপোর্ট পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ। আমি ফ্যামিলি কম্বো ড্রেস ও বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে কাজ করছি, আবার এই মাসেই রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শে জামদানি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রথম মাসেই জামদানি শাড়ির অনেক সাড়া পাচ্ছি। শুধু উই-এ আমার সেল ছয় লাখ টাকা।’

আরিফা খাতুন জানান, ২০২০ সালের শুরু থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বাদ পেতে শুরু করেন। তাঁর এখন মনে হয়, একজন নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নেওয়া উচিত। তাহলে নিজেকে যেমন প্রমাণ করার সুযোগ থাকে, তেমনই আরও মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যায়। তাঁর কাজের অনুপ্রেরণা রাজিব আহমেদ স্যার ও ‘জামদানি রানি’ নামে পরিচিত কাকলী রাসেল তালুকদার। তাঁদের পথচলা ও জীবনের প্রতিটি বিষয় আরিফাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয় এবং অনুপ্রেরণা জোগায়।

আরিফার সাফল্যের পেছনে উই-এর ভূমিকা অনেক। তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন পূরণে উই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমি ২০১৮ সাল থেকে উই-এ আছি। আমি উই-কে বড় হতে দেখেছি। ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে উই-এ নিয়মিত। আমার মনে হয় না এমন একটা দিন বাদ আছে, যেদিন আমি ছিলাম না। দেশি পণ্যের পূর্ণ জাগরণ ঘটেছে উই-এ। উই হাজার নয়, বরং লাখ লাখ নারীর স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। উই আছে বলেই অনেক নারীর সংসারের হাল ধরার সংগ্রামী কাহিনি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন দেশ-বিদেশে বা প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মানুষ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে। নারীরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন।’

আরিফা পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন। ডিজাইন করতে পারেন। রান্নায়ও ভালো হাত তাঁর। আরিফার উদ্যোক্তা-জীবন তিন বছর। তাঁর উদ্যোগে এখন চারজন কর্মী কাজ করেন। আর এ উদ্যোগে সার্বিক সহায়তা করেন তাঁর স্বামী।

উদ্যোক্তা হওয়ার পরে মধুর স্মৃতিকথা জানতে চাইলে আরিফা বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা-জীবনে সফলতার পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন রাজিব আহমেদ স্যার ও আমার পরিবার। স্যার আমাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ও আমার পরিবার আমাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করেছে। উদ্যোক্তা-জীবনে অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। আমি নিজের জন্য যে সময়টুকু, সে সময় আরাম না করে বিজনেস-রিলেটেড পড়াশোনা করি, নিজের বেসিক স্কিল তৈরির কাজে সময় দিই। ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করলেও সময়ের জন্য যাওয়া হয় না। এমন অনেক ছোট ছোট চাহিদা আমাদের ছাড় দিতেই হয়।’

বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আরিফা হতে পেরেছেন? এ উদ্যোক্তার উত্তর, ‘লাখ টাকার সেল করতে হলে এখন খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। আমি ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে টানা অ্যাকটিভ ছিলাম। ২০২০ সালের ৪ জুন আমি লাখপতি হই। কারণ, উই এখন দেশের সেরা প্ল্যাটফর্ম এবং শক্তিশালী দেশি পণ্যের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ১১ লাখ মেম্বার আছেন। তাই উই-এর নিয়ম মেনে নিয়মিত অ্যাকটিভ থাকলে এবং নিজের পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করতে পারলে খুব সহজে নিজের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।’

আরিফার আগামী দিনের পরিকল্পনা হলো, জামদানি পণ্যকে দেশ ও বিদেশের মানুষের কাছে আরও পরিচিত করা। জামদানি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য প্রতিদিন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। তাঁর ভাষ্যে, ‘জামদানি আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে, এটি আমাদের গর্বের বিষয়। তাই জামদানিকে ভালোবেসে অন্তরে লালন করব এবং মানুষের মনেও যাতে জামদানির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’