সাইবার হামলার শঙ্কায় রাতে সব ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ

Looks like you've blocked notifications!

সাইবার হামলার আশঙ্কায় দেশের সব ব্যাংকের এটিএম বুথের সেবা প্রতিদিন রাত থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ব্যাংক রাত ১০টা, কোনো ব্যাংক ১১টা, আবার কোনো কোনো ব্যাংক রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত তাদের এটিএম সেবা বন্ধ রেখেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলেও ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ সাইবার হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে সব ব্যাংকে চিঠিও পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা জারি করার পর ব্যাংকগুলো অনলাইন ব্যাংকিং সীমিত ও তদারকি জোরদার করে। এরই অংশ হিসেবে রাতে ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সতর্কতা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য আসে, ‘বিগল বয়েজ’ নামে উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালাতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আরোপ করা হয় বাড়তি সতর্কতা, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, গত সপ্তাহে দেশের আর্থিক খাতের অনলাইন সিস্টেমে একটি ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার বা ভাইরাসের সন্ধান পায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। সঙ্গে সঙ্গে তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে। এর পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অর্থ চুরিতেও উত্তর কোরিয়ার একটি চক্র জড়িত ছিল বলে এরই মধ্যে এফবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। বিশেষ ধরনের বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে এই লেনদেন করা হয়। রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে চক্রটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরো জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে সুইফট নেটওয়ার্ক বন্ধ আছে মর্মে প্রকৃত কোম্পানির ছদ্মবেশ ধরে একই নাম, ওয়েবসাইট, ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে প্রতারকরা।

গত এপ্রিলেও একটি বেসরকারি ব্যাংকে তাদের করেসপনডেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর অনুরোধ করে ভুয়া চিঠি পাঠানো হয়। তবে ব্যাংক সতর্ক থাকায় ভেরিফাই করে নিশ্চিত হয় যে চিঠি পাঠানোর বার্তা ছিল ভুয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউকে অবহিত করা হয়। তখন বিএফআইইউ থেকে করোনা প্রাদুর্ভাবের সুযোগে প্রতারণামূলক কার্যক্রমের বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৪৩ শতাংশ জালিয়াতির ঘটনা প্রযুক্তিভিত্তিক। প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং জালিয়াতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে এটিএম ও প্লাস্টিক কার্ডের মাধ্যমে।