লাখপতির গল্প
সাড়া ফেলেছে শিরিনের কাজুবাদামের আচার
কাজুবাদামের আচার বিক্রি করে বেশ সাড়া ফেলেছেন রাঙামাটির উদ্যোক্তা শিরিন সুলতানা অরুণা। কাজুবাদাম ও অন্যান্য পণ্য নিয়ে কাজ করে এখন লাখপতি তিনি। শুরুতে অফলাইনে পণ্য বিক্রি করলেও পরে অনলাইনে ব্যবসা করেন। পান সাফল্য। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি শিরিনকে।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় শিরিন সুলতানা অরুণার। জানান, উদ্যোক্তা-জীবনের শুরু থেকে বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বর্ণনা করেন মধুর স্মৃতিও।
শিরিন সুলতানা অরুণার প্রতিষ্ঠানের নাম এস এস এগ্রো প্রডাক্ট এবং এস এস হ্যান্ডিক্রাফট। তো, শুরুটা কীভাবে? উত্তরে শিরিন বলেন, ‘আমি মূলত কাজ শুরু করি ২০০৮ সাল থেকে। ২০১১ সাল থেকে অনলাইনে আছি এবং ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করি। এপ্রিল থেকে কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি। দুই বছরে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।’
শিরিন জানান, পরিবার তাঁকে শতভাগ সহায়তা দিচ্ছে। তাঁর মতো সব পরিবার যদি পাশে থাকে, তবে নারীরা আর পিছিয়ে থাকবে না।
উদ্যোক্তা হয়ে কেমন লাগছে? উত্তরে শিরিন বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। উই আমাদের উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা। অনেক নারী ঘরে বসে স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে পারছে। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি যাঁর অবদান, তিনি হচ্ছেন আমার স্বামী। আমি সামনে একটা পা দিতে চাইলে দুই পা পিছিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড আমাদের দুই দুই পা করে চার পা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। উনার মতো সঙ্গী পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আজ আমি যতটুকু এগিয়েছি, সবকিছুর পেছনে আমার স্বামীর অবদান বেশি। আর আমাদের মতো নারীরা উদ্যোক্তা হতে পেরেছি উই-এর জন্য।’
ফেসবুক গ্রুপ উই-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন শিরিন। তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম উই। গত বছরের ২৬ মার্চ আমার অফলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে আমি উই-এ জয়েন করে আমার পণ্যগুলো বিক্রি করতে থাকি। আমি আবার নতুন করে সব শুরু করার অনুপ্রেরণা পাই। আমার মতো লাখ লাখ নারী উই প্ল্যাটফর্মে এসে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে এবং শুধু স্বপ্নই দেখছে না, তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। উই-কে আমরা এক টাকাও দিই না, কিন্তু আমাদের অনেক কিছু ফ্রি দিচ্ছে। আমরা উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, মাস্টার ক্লাসের মতো আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিংগুলো উই থেকে পাই। উই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। উই-এর এত গুণ, বলে শেষ করা যাবে না। আমি আমার কাজুবাদাম ও বুটিকস প্রডাক্টে বেশ সাড়া পাচ্ছি। দেশের ৬৪ জেলাতেই আমার প্রডাক্ট পৌঁছে দিয়েছি। কাস্টমার-ফিডব্যাক খুব ভালো। কাস্টমারের মতে, প্রডাক্ট ভালো এবং ফ্রেশ হলে কিছু বেশি দাম দিয়ে খেতেও আপত্তি নেই। সবাই তার পরিবারকে বেস্টটা দিতে চায়। এই দিক দিয়ে নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ব করতে পারি, আমি সততার সাথে ১০০ ভাগ ভালো প্রডাক্ট দিই।’
কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? শিরিন সুলতানা অরুণা বলেন, ‘এগ্রো প্রডাক্ট, যেমন—দেশি কাজুবাদাম, কাজুবাদামের আচার, কাজুর বাটার, জলপাই আচারসহ বিভিন্ন সিজনাল ফল। এখানে একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে এই প্রথম কাজুবাদামের আচার করা শুরু করেছি আমি। আর একটা বুটিকের বিজনেস আছে। আমার পণ্যগুলো হচ্ছে—স্টিচ থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, ফতুয়া, বাচ্চার জামা, পিনন শাড়ি, হাতের কাজের বেড কভার, কাঁথা, বাচ্চার কাঁথা, টেবিল ম্যাট, মশারি কাভার ও পার্বত্য এলাকার কোমরতাঁতের শাল।’
শিরিন সুলতানা অরুণা জানান, কোভিড শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত অনলাইনে শুধু কাজুবাদাম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকার। এ ছাড়া তাঁর বুটিকস পণ্য বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ টাকার মতো। ১০ মাসে অনলাইনে তাঁর মোট বিক্রি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিরিন আরও জানান, শুধু অনলাইনে বুটিকস প্রডাক্ট ও কাজুবাদাম মিলে মাসে তিন লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়।
উদ্যোক্তা হওয়ার পরে মধুর কোনো স্মৃতি? শিরিন বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার পরে আমার মধুর স্মৃতি অনেক। এর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছি যখন উই-এর ১০ লাখ মেম্বারের মধ্যে ১০ জনকে জয়ী অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে, সেখানে জুনায়েদ স্যার যখন আমার নাম উল্লেখ করলেন; আমি যে কী খুশি হয়েছি, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমার খুশির কান্না দেখে ১০ লাখ মেম্বার কেঁদেছে। এই যে ভালোবাসা, এটা উই-এ না আসলে অনুভব করতে পারতাম না।’
শিরিন উই-এ যুক্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যেই লাখপতি হন। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, কোনো কাজ শুরু করার আগে সে কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে, সোর্সিং জানতে হবে, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যে পণ্যটা আনা হবে, সেটার চাহিদা কী রকম, কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ শুরু করলে সাফল্য আসবেই।