টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সয়াবিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘সয়াবিন সাপ্লাই চেইন উন্নয়ন’ শীর্ষক পলিসি সভায় আলোচকরা। ছবি : এনটিভি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দুর্যোগ সহনশীল শস্য হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সয়াবিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সয়াবিনের সাপ্লাই চেইন উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব ও সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসংক্রান্ত সহায়তা প্রয়োজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘সয়াবিন সাপ্লাই চেইন উন্নয়ন’ শীর্ষক পলিসি সভায় এসব কথা উঠে আসে।

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশিদ ভুঁইয়া।

সভায় বাংলাদেশে সয়াবিনের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোসহ বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে নানাবিধ সুপারিশ করা হয়।

এ সময় সলিডারিডাড-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার জানান, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় সলিডারিডাড সাড়ে চার বছর ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার, ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড লিংকেজেস (সফল) প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য, দুগ্ধ-সবজি ও ফল চাষে নিয়োজিত ৫৮ হাজার ক্ষুদ্র কৃষককে টেকসই কৃষি পদ্ধতি ও উন্নত বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে আসছে।

এ ছাড়া প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে সয়াবিন সাপ্লাই চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিবেশ, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।

সলিডারিডাড’র বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি-অর্থনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে চাষিদের সামর্থ্য উন্নয়ন, সয়াবিনের পুষ্টি সম্ভাবনা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র অ্যাডভাইজর (ফুড সিকিউরিটি) ওসমান হারুনী বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য খাদ্যের সঠিক ব্যবহার ও খাদ্য বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের সয়াবিন খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাজারব্যবস্থার উন্নয়নে ডাচ সরকারের অব্যাহত সহায়তা থাকবে বলে তিনি জানান। এ জন্য ডাচ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান ওসমান হারুনী।

সভায় সয়াবিন ভ্যালু চেইন বিশ্লেষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন চেঞ্জমেকারস-এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দ তামজিদ উর রহমান, বীজ প্রযুক্তিবিদ ও সিড রেগুলেশন বিশেষজ্ঞ শাহজাহান আলী।

তামজিদ উর রহমান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দুর্যোগ সহনশীল শস্য হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সয়াবিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সময় তিনি বীজ উন্নয়ন, কৃষক ও বাজার ব্যবস্থায় নিয়োজিত বিভিন্ন পক্ষের সামর্থ্য উন্নয়ন, আচরণগত পরিবর্তন সংক্রান্ত যোগাযোগ উদ্যোগ গ্রহণ ও বহু অংশীদারভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দেন।

শাহজাহান আলী তাঁর উপস্থাপনায় সয়াবিন খাতে একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি সহায়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সয়াবিনের পুষ্টিগত ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনসীল জাত উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণ এবং সাপ্লাই চেইন ও বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।

আলোচকরা মানুষের খাদ্য, পশুখাদ্য, মাছের খাদ্য এবং তৈলশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদানের ওপর জোর দেন।