২০১৬ সালে ধস নামবে চীনের!

Looks like you've blocked notifications!
বেইজিংয়ের পূব আকাশে ভোরের সূর্য।

চীনে ধস নামবে ২০১৬ সালে -এমন আভাস দিয়েছে হংকংয়ের সাপ্তাহিক পত্রিকা ফ্রন্টলাইন। তাদের বিচার বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশটির ক্ষমতাসীন চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) তিন স্তরে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে।

চীনের রাজনীতির ওপর ভিত্তি করেই এমন মন্তব্য করেছে ফ্রন্টলাইন। যে তিনটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- প্রথমত : চীনের অর্থনীতিতে ধস নামবে। এর পর সিসিপির যে অবকাঠামো তা ভেঙ্গে পড়বে। আর ২০১৬ সালে পুরো সমাজ ব্যবস্থা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।  

ফ্রন্টলাইনের এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হবে কি না, তা সময় বলে দেবে।  চীনের অর্থনীতিতে ধস নামছে না। বরং দিনকে দিন পূর্ব এশিয়ার বিশাল এ দেশের অর্থনীতি আরো বেশি মাত্রায় গতিশীল হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তিতে পরিণত হতে চলেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, পুঁজির অবাধ প্রবাহের কারণে সংকটে পড়বে চীন --বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগোষ্ঠী তাঁদের মূলধন দেশের বাইরে কোনো ব্যাংকে মজুদ রাখতে পারে। এর ফলে মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপির) শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ অর্থ দেশের বাইরে চালান হতে পারে, আর সেটা অসম্ভব কিছু নয়।  

চীনের বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিরা বিদেশে বিনিয়োগ করেন বটে, তবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। আর ব্যবসায়ী সমাজ তাদের টাকা দেশের বাইরে কোনো ব্যাংকে রাখবে- এমন  চিন্তা তাদের মাথায় আসে না।

বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, দেশটির গৃহনির্মাণ শিল্পে ধস নামবে। ব্যাংকিং জগতে কালো ছায়া নেমে আসতে পারে। বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। স্থানীয় সরকার তাদের কার্যক্রম চালাতে ব্যাংক ঋণ নিতে বাধ্য হবে। 

অর্থনীতিতে ধ্স নামতেই পারে, তার মানে এই নয় পুরো দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো পরিচালনার জন্য সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয় বটে, অর্থনীতিতে যখন সুবাতাস বইতে থাকে তখন ব্যাংকঋণ পরিশোধ করে দেয়। এটা শুধু চীন নয়, অন্য দেশগুলোর সরকারও তা করে থাকে।

শিল্প-কলকারখানায় বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে -এ ধারণা কিছুটা সত্য বটে, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রবাহ বিচার বিশ্লেষণ করেই বিনিয়োগকারী তার পুঁজি লগ্নি করে। ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পথে পরিচালিত হয় তা পর্যালোচনা করেই ব্যবসায়ীগোষ্ঠী এগুবে।

অর্থনীতিবিদদের ধারণা চীনের অর্থনীতি আগামী বছর থেকে নেতিবাচক বা বিপরীত দিকে প্রবাহিত হবে। বিনিয়োগ কমবে। প্রবৃদ্ধি বহুলাংশে কমে যাবে। মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আসা বিচিত্র কিছু নয়। সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রকে সচল রাখতে মুদ্রানীতি পরিবর্তন করতেই পারে।

মুদ্রানীতি পরিবর্তন করলেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়ে যাবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তন না হলে মুদ্রানীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।

বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের মনে রাখা উচিত চীনের রাজনীতি সমাজতান্ত্রিক হলেও এর অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থা অনেকটাই স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। আর সে কারণে সরকার যদি মুদ্রানীতির পরিবর্তন ঘটায়, সেটা ভেবে চিন্তেই করবে।

স্থানীয় সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে তাদের প্রশাসন চালাতে চেষ্টা করবে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল করবে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা আরো উন্নত করতে নিজেরাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করবে। কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকবে না।

ফ্রন্টলাইন পত্রিকা এবং বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের অর্থনীতিতে ধ্স নামবে ২০১৬ সালে এবং রাজনৈতিক সংকট থেকেই এ ধারা শুরু হবে। চলতি বছরের যে কোনো সময় থেকেই রাজনৈতিক সংকট হতে পারে।

বহু ব্যবসা বাণিজ্য নিঃশ্বেষ হয়ে যেতে পারে। রাজনীতিতে ধ্স নামলে ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি হতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক সম্পদে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

চীনের সমাজতান্ত্রবিরোধী গোষ্ঠী মনে-প্রাণে চাইবে যেভাবেই হোক সিসিপির পতন হোক। তারা সিসিপির ধ্বংস দেখতে চায়। রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তনের যে আভাস দিয়েছেন তা কোনো কাজে আসবে না। অর্থনীতিবিদরা তাই মনে করেন।

বিশ্ব অর্থনীতিবদদের ধারণা শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নিজেরা নতুন কৌশল নির্ণয় করে এগুতে থাকবে। 

ফ্রন্টলাইনের এসব ধ্যান-ধারণা কতটা কাজে লাগবে তা বলা মুশকিল, কিন্তু এ কথাও সত্য চীনের সরকার এবং নীতি নির্ধারক নিশ্চয়ই দেশের বিপর্যয় প্রত্যাশা করেন না।

১৯৮৯ সালে চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, তিয়েনমান স্কোয়ারে বিক্ষোভরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ট্যাংক চালাতে দ্বিধা করেনি তৎকালীন সরকার।

রাজনৈতিক আন্দোলন দমাতে চীনের সরকার এবারও তাই করবে। এ ক্ষেত্রে কারো মতামতের তোয়াক্কা করবে না।