গ্রামীণফোনে ‘শহুরে প্রতারণা’

দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করা গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে বারবার কল ড্রপ, ভুতুড়ে বিল আর থ্রি-জি সেবার নামে প্রতারণা হচ্ছে বলে অভিযোগ এর গ্রাহকদের।
সম্প্রতি গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক নিয়ে ফেসবুকে বার্তা দিয়েছেন খোদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ওই বার্তায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিষয়টি তিনি গ্রামীণফোনকে একাধিকবার জানালেও ওই প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেওয়া ওই ফেসবুক বার্তায় মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামীণফোন সেবার চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকেই ঝোঁকে বেশি।’
গ্রামীণফোন ব্যবহারকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গ্রামীণফোন ব্যবহারের অসুবিধা হচ্ছে, যখন তারা পোস্টপেইড বিল নিতে আসে তখন ঘ্যাট করে দুইশ, আড়াইশ, তিনশ টাকা করে কেটে নিচ্ছে। আমরা যখন গ্রামীণফোনের এমবি (মেগাবাইট) কিনি দুইশ, চারশ বা পাঁচশ টাকা দিয়ে সেখানে তারা কম এমবি দেয়। কিছুক্ষণ পর পর নেট অফ হয়ে যায়।’ urgentPhoto
গ্রামীণফোনের আরেক গ্রাহকের অভিযোগ, ‘ গ্রামীণফোনের এসব সমস্যার কারণে আমি এর সিম ব্যবহারই বাদ দিয়েছি। সব কিছু দেখতে ভালো, অ্যাডটা অনেক সুন্দর হয়, ভাষাটা অনেক সুন্দর দেখা যায়, কিন্তু অনেক প্রতারণার শিকার আমাদের হতে হয়। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট; নামে গ্রামীণফোন, কাজে শহুরে প্রতারক।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) করা এক জরিপে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের বিভিন্ন প্যাকেজে থ্রি-জির গতি অন্য সব অপারেটরের চেয়ে কম- ৫১২ কেবিপিএস এবং ১ এমবিপিএস। থ্রি-জির এমন নিম্নগতির জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘গ্রাহক এখান সেই প্রোপার সার্ভিস পাচ্ছে না। বিকজ তার একশ ভাগ থ্রি-জি হয়নি। তাদের ২০ ভাগ থ্রি-জি। কেউ যদি ২৫ ভাগ থ্রি-জি চায় তাহলে সে অতিরিক্ত ৫ ভাগ দেবে কোথা থেকে। এখন যদি ধরেন আমি থ্রি-জি দিতে যাই তাহলে টু-জি ইকুইপমেন্ট ফেলে দিতে হবে না? কিন্তু ওরা কি এখনো ইকুইপমেন্ট খুলেছে। তারা কিন্তু থ্রি-জির ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টই করেনি ঠিক মতো।’
আর কলড্রপ ও ভুতুড়ে বিলের পেছনের কারণ জানালেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যারের কোনো ব্যাপার না। কথা হলো আমি সফটওয়্যার কীভাবে ব্যবহার করছি। আমি ম্যানুয়ালি আমার সফটওয়্যারে ইনটেশনালি কোনো ইনস্টল দিচ্ছি কি না। তাহলে তো তার আউটপুটও সেভাবেই হবে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছেও গ্রামীণফোনের সেবা নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ পৌঁছেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, কমিশন সব সময়ই গ্রাহকস্বার্থ রক্ষায় কাজ করে চলেছে।
বিটিআরসির সচিব সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের একটা টাস্কফোর্স আছে, ককম্প্লিট ম্যানেজমেন্ট। তারা এটাকে দেখভাল করছে। অভিযোগটা যেখানে যাওয়া দরকার সেই সংশ্লিষ্ট অফিসেই যাচ্ছে। তারা সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে।’
তবে গ্রামীণফোনের দাবি, তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী। গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘কলড্রপের হার বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটর, বিশেষ করে জিপি, আমাদের ইন্টারন্যাশনাল যে বেজ মার্ক তার চেয়ে খুব ভালো করছি। খুব দ্রুতগতিতে আমরা থ্রি-জি সেবা বাড়াচ্ছি। আগামী এক দেড় বছরের মধ্যে আশা করছি হয়তো বা সারা বাংলাদেশই কভারেজে আসবে।’