ভারিস্ক ম্যাপলক্রফটের মূল্যায়ন

বিনিয়োগের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্বে নিম্ন শ্রমমজুরির পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। শ্রমমজুরি কম হওয়ায় বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্কষণীয়। এ দেশের প্রতি সরবরাহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝোঁক রয়েছে। তবে নিম্নমানের কাজের পরিবেশ, শিশুশ্রম ও মানব পাচারের প্রবণতা থাকায় বড় ধরনের ক্ষতিপূরণও দিতে হতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ  দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছে ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভারিস্ক ম্যাপলক্রফট।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক শ্রমশক্তির দেশগুলোর মজুরি, কর্মসংস্থান নীতিমালা, সামাজিক নিরাপত্তা অবস্থা ও শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে শ্রমমজুরি সূচক মূল্যায়ন করেছে ভারিস্ক ম্যাপলক্রফ্ট। এ সূচকে বিবেচনায় নেওয়া ১৭২টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজুরি পান ইতালির শ্রমিকরা। এ সূচকে দ্বিতীয় ফ্রাঞ্চ, তৃতীয় বেলজিয়াম, চতুর্থ স্পেন, পঞ্চম ফিনল্যান্ড, ষষ্ঠ স্লোভেনিয়া, সপ্তম লুক্সেমবার্গ, অষ্টম অস্ট্রিয়া, নবম আইসল্যান্ড ও দশম গ্রিস। শ্রমমজুরি সূচকের প্রথম ২৫টি দেশই পশ্চিম ইউরোপের। তবে উচ্চ শ্রমমজুরি দিতে হয় বলে এসব দেশের শ্রমিকদের প্রতি আগ্রহ কমেছে। ফলে বিশ্বের সরবরাহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা শ্রমমজুরি কম থাকা দেশগুলোর দিকে ঝোঁকেন।

ভারিস্ক ম্যাপলক্রফটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক চালর্স ভ্যান ক্যালোয়েন বলেন, ‘বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে শ্রমমজুরি। যেসব দেশে শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেশি, সেসব দেশে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম থাকে।’

শ্রমমজুরি সূচকে বাংলাদেশ ১৭০তম, মিয়ানমার ১৭১তম ও কম্বোডিয়া ১৬৯তম। এ সূচকে চীন ৬৪তম দেশ। দেশটির অর্থনীতির দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। ফলে তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্ন মজুরির দেশ বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়াসহ অন্যত্র বিনিয়োগ করছে।

আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) তথ্যমতে, চীনে যেখানে একজন শ্রমিককে মাসে ৩৬ হাজার টাকা দিতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিককে দিতে হয় আট হাজার টাকা। আর বাংলাদেশের শ্রমিককে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা দিতে হয় না। তবে চীনের শ্রমিককে ২০ শতাংশ ভাতা দিতে হয়। এসব কারণে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বিনিয়োগে ঝুঁকেছে চীন।

ভারিস্ক ম্যাপলক্রফট নিম্ন মজুরির দেশগুলোতে বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এসব উন্নয়নশীল দেশের নিম্নমানের আর্থসামাজিক অবস্থা ও পর্যাপ্ত পরিবেশগত সুরক্ষা না থাকায় তাও বিনিয়োগকারীদের জন্য পরোক্ষভাবে ঝুঁকি তৈরি করে এবং অতিরিক্ত খরচ বাড়ায়। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড সুনাম নষ্ট হতে পারে। দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি নিম্নমজুরি ও নিম্নমানের কাজের পরিবেশের কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিদেশি বিনিয়োগ ও দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির কোনো সুফল না পেলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে পারে।

প্রত্যক্ষ ও কৌশলগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই কোনো দেশের শ্রমিকদের মজুরি, কাজের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বুঝে নিতে হবে বলে মনে করেন চালর্স ভ্যান ক্যালোয়েন।