অনিশ্চয়তায় শেয়ারবাজারে সূচকের টানা পতন
চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অবিশ্বাস ঘনীভূত হচ্ছে। অনিশ্চয়তায় শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন তারা। এতে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে(ডিএসই) আজ সোমবার প্রায় সাড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএএক্স। এটি২০১৪ সালের ৫ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। ওই দিন এ সূচক দাঁড়িয়েছিল ৪৪৭২ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। আজ এ সূচক দাঁড়িয়েছে ৪৪৭৭ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে।
শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওসমান ইমাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সব খাতের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাইছেন। ফলে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অন্য সময় দেখা যায়, বাজারে শেয়ারের দাম কম থাকলে বিদেশি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনেন। তবে সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে সরে আছেন তাঁরা।’
দেশের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ প্রবল। পুঁজির নিরাপত্তায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছেন। এতে আজ ডিএসইতে ৭৭ শতাংশ শেয়ার দাম হারিয়েছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজার নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অবিশ্বাস ঢুকে গেছে। ফলে শেয়ারবাজারে এ ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা ঘনীভূত হচ্ছে।’
আবু আহমেদ বলেন, ‘আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাজারে লেনদেন শুরু হলে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। মূলত বিনিয়োগকারীরা এখন কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনই বিশ্বাস করছে না। ফলে তারা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে।’
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আজ লেনদেনে এগিয়ে থাকা বড় মূলধনি কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম কমেছে। আর মূল্যসূচকের গতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারা ব্যাংকিং ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিকখাতের দু-একটি বাদে বাকি সব শেয়ার দাম হারিয়েছে।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৬টি কোম্পানির ছয় কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে।মোট লেনদেনের পরিমাণ ২৮৯ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৪ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেশি।
ডিএসইএক্সআজ আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৫৮.৪০ পয়েন্ট কমে ৪৪৭৮.১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১৭.৯০ পয়েন্ট কমে ১৬৯১.৫১ এবং শরিয়াহ সূচক ১৩.৯০ পয়েন্ট কমে ১০৯০.৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৬টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ২৩৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ২২ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ। আজ লেনদেন হওয়া ২৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ১৬৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল ২০টির। সিএসইর সার্বিক সূচক ১৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৭০৭ দশমিক ১৩ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেনে এগিয়ে থাকা ১০টি কোম্পানি হলো: গ্রামীণফোন, শাহজিবাজার পাওয়ার, ইফাদ অটোস, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, এসিআই লিমিটেড, শাশা ডেনিমস, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ওয়ান ব্যাংক, এমজেএল বিডি ও সিঙ্গার বিডি।
দাম বাড়ায় এগিয়ে থাকা ১০টি কোম্পানি হলো- রেকিট বেনকিজার, ওয়ান ব্যাংক, এটলাস বাংলাদেশ, সোনালী আঁশ, স্টাইলক্র্যাফট, জাহিনটেক্স, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।
অন্যদিকে বেশি দাম হারানো ১০টি কোম্পানি হলো: সিঙ্গার বিডি, ট্রাস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সমতা লেদার, ইমাম বাটন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, শাহজিবাজার পাওয়ার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স।