দুই মাসে ফ্রিজ-এসি বিক্রি বেড়েছে তিন গুণ

Looks like you've blocked notifications!

গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ), এয়ার কন্ডিশনার (এসি), এয়ারকুলার ও ফ্যান বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে ‌ ফ্রিজ ও এসি বিক্রি বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

বিক্রেতারা বলছেন, এসব পণ্য সারা বছরই কম বেশি বিক্রি হয়। তবে বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বছরের মোট চাহিদার ৬০-৬৫ শতাংশ ফ্রিজ ও এসি এ সময় বিক্রি হয়।

তবে অন্য বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের তুলনায় এবার এসব পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে বিক্রি ছিল দ্বিগুণ। এপ্রিলে এর পরিমাণ প্রায় তিন গুণ হয়েছে।

বিক্রেতাদের মতে, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ সময়ে এসি, ফ্রিজ, ব্লেন্ডার, ফ্যান ও এয়ারকুলার বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে এসি ও ফ্রিজের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। ফ্যানের মধ্যে মাঝারি সাইজের টেবিল ফ্যানের চাহিদা বেশি।

ফ্রিজ ও এসি বেশি বিক্রির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় মাস ধরে দেশজুড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। চলছে দাবদাহ ও গরম। এতে বাসাবাড়িতে ঠান্ডা পানি ও খাবার সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে।

রাজধানীর বাংলামোটরের সিঙ্গার শোরুমের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গরমের কারণে ফ্রিজ ও এসির বিক্রি বেড়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের শো-রুমের মে ও জুন মাসের স্টক শেষ হয়ে গেছে। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে বিক্রি তিন গুণ বেড়েছে।’

‘পণ্যের মূল্য ছাড়ে বৈশাখী অফার এখনো চলছে। এ অফারে ছোট-বড় সব পণ্যেই নগদ ছাড় রয়েছে। ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য সাধারণত শৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্যের অন্তর্ভুক্ত। দামের পরিমাণ একটু বড় অঙ্কের হওয়ায় বাজেট ও পরিকল্পনা করে এসব পণ্য কেনা হয়। গরমের সাথে রমজান কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই রমজান বা ঈদে যে পণ্যটি কিনতেন তা এখনই কিনছেন।’

বর্তমানে বাজারে দেশি ও বিদেশি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান ও সাইজভেদে দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে গরমের এ মৌসুমে মাঝারি দামের ফ্রিজ ও এসি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম ঘুরে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ওয়ালটনের ফ্রিজ। এ ছাড়াও মার্সেল, বাটারফ্লাই, ফিলিপস, মাইওয়ান, মাই চয়েস, ভিশন, যমুনা ও ভিকন ব্র্যান্ডের ফ্রিজও ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে স্যামসাং, এলজি, সিঙ্গার, শার্পসহ আরো কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্রতি উচ্চবিত্ত ক্রেতার আগ্রহ বেশি।

ইস্কাটনের ওয়ালটন প্লাজায় কর্মরত বিক্রয়কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক দিন ধরে ফ্রিজের বিক্রি অনেক বেড়েছে। আমাদের কোম্পানির অনেক পণ্যের মধ্যে ফ্রিজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। গরমের কারণে এয়ারকুলারও বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

বাংলামোটরের এলজি-বাটার ফ্লাইয়ের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ফেরদৌসী আক্তার সীমা বলেন, ‘শীতের শেষে দিক থেকেই গরমের বাজার ধরার প্রস্তুতি শুরু হয়। গরমের কারণে ফ্রিজের বিক্রি ভালো হচ্ছে। ফ্রিজ কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। আমাদের পণ্যে এখনো বৈশাখী অফার চলছে। এতে নগদ ছাড়সহ গিফট হ্যাম্পার রয়েছে।’

ঝিগাতলার ওয়ালটন প্লাজার শাখা ব্যবস্থাপক সামসুজ্জামান বলেন, ‘গত দুই মাস থেকে আমাদের ফ্রিজের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। প্লাজার পণ্যের মধ্যে ফ্রিজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটনের ফ্রিজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন সাড়ে ১৯ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ হাজার টাকা দামের ফ্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে কম ও মধ্যম সাইজের ফ্রিজ বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

ধানমণ্ডির স্যামসাং শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি জুবায়ের খান বলেন, অন্যান্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আমাদের পণ্যের মান ভালো। দামও একটু বেশি। ফলে মধ্য ও উচ্চবিত্তরাই আমাদের নিয়মিত গ্রাহক। গরমের কারণে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ফ্রিজ ও এসির বিক্রি অনেক বেড়েছে। ফ্রিজ, এসি এগুলো মূলত সৌখিন পণ্য। বৈশাখের বোনাসের কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আর গরমের মাত্রা বেশি হওয়ায় এবারের বিক্রি তুলনামূলক বেশি বেড়েছে।’

ওয়ালটনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফিরোজ আলম বলেন, ‘আমাদের পণ্যের মধ্যে গত মাস থেকে গরমের কারণে এসি ফ্রিজ ও এয়ারকুলার বেশি বিক্রি হচ্ছে। গত বছর গরমে এপ্রিল মাসের শেষে চাহিদা বাড়লেও এবার এক মাস আগে থেকে মৌসুম শুরু হয়েছে। ফ্রিজ ও এসির বিক্রিও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে।’

ফিরোজ আলম জানান, ফ্রিজ ও এসির মূল্য বেশি হওয়ায় কিস্তিতে বিক্রি বাড়ছে। এবারের বৈশাখী ভাতা ও অতিরিক্ত গরমের কারণে বিক্রি বেড়েছে।