সিপিডির বিশ্লেষণ

চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমেছে কর্মসংস্থান

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি। ছবি : ফোকাস বাংলা

গত অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কিন্তু সে মাত্রায় কর্মসংস্থান বাড়েনি। এ ধারা আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৫-১৬ ‘তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘গত (২০১৩-২০১৫) দুই বছরেই শিল্প খাতে ১২ লাখ কর্মসংস্থান কমেছে। যা শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।’

আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক তুলে ধরে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মতো হলে দেশের বিনিয়োগ ভালো হতো। সামাজিক খাতগুলোতে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। এখানে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। আবার বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না এসব প্রকল্প বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে।’

এক পরিসংখ্যান প্রতিবেদন তুলে ধরে সিপিডি জানায়, বিশ্বের ১৬১টি দেশের মধ্যে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৫তম। আর স্বাস্থ্য খাতে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯তম। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে কম্বোডিয়া।  

সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভ্ট্টাচার্য বলেন, ‘দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় দ্বন্দ্ব। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি একটি ভালো দিক। তবে প্রবৃদ্ধির গুণগত মান থাকা দরকার।’

দেবপ্রিয় আরো বলেন, ‘এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্য মূল্যে নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। এর ফলে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যয় কমবে। যা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রতিবছরই বাজেটের আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ১৭-১৮ শতাংশ ঘাটতি থাকে। তাই বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট চায় সংস্থাটি।’

দেবপ্রিয় ভ্ট্টাচার্য বলেন, ‘সিপিডি মনে করে আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতেও ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। এটা ভালো দিক। কিন্তু এর সুফল কৃষক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী পাচ্ছে না। তাই কেরোসিন ও ডিজেলের দাম আরো কমানো প্রয়োজন।’

‘দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য ভালো না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। ব্যবস্থাপকদের সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। এ খাতকে শক্তিশালী করতে সুশাসন প্রয়োজন।’ এ জন্য ব্যাংক ও আর্থিক খাতে কমিশন গঠন করা যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আগামী বাজেট যেনো মূসক (ভ্যাট) নির্ভর না হয়। আমাদের আয়করের ওপর জোর দিতে হবে। কেননা, আয়কর একটি প্রত্যক্ষ কর। যারা সামর্থ্যবান তারাই শুধু আয়কর দেয়। ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর। যা মূলত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়ে থাকে। তাই প্রত্যক্ষ করের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।’

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে অবশ্যই ভ্যাট আহরণ বাড়াতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যাতে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। আর নতুন যে ভ্যাট আইন সরকার বাস্তবায়ন করার চিন্তা করছে তা সময় নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ না করে ক্ষেত্র বিশেষে ও সেবা খাতে তা কম রাখা যেতে পারে বলেও মনে করে সিপিডি।’