মোংলা কাস্টম হাউসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়

Looks like you've blocked notifications!
খুলনার মোংলা কাস্টম হাউস গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছে। ছবি : সংগৃহীত

বিগত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করেছে খুলনার মোংলা কাস্টম হাউস। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গত অর্থবছরে শুল্কযোগ্য পণ্য আমদানি ও কর ফাঁকি রোধ হওয়ায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে দাবি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

মোংলা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের জন্য মোংলা কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই হাজার ৬৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। তবে এ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। আর গত বছরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোংলা কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

মোংলা কাস্টম হাউসের কর কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল-আমিন প্রামাণিক জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পণ্য খালাসের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। আমদানীকৃত পণ্যের ৫৫ শতাংশই সার, গম বা এ ধরনের পণ্য। সে বিবেচনায় শুল্কযোগ্য পণ্যের পরিমাণ অনুমানিক ১৫-১৬ শতাংশ। মোংলা বন্দরে প্রধান রাজস্ব আদায় হয় আমদানীকৃত গাড়ি থেকে। কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, মিথ্যা ঘোষণা প্রতিহতকরণ, কর ফাঁকি উদঘাটন, পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি, ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন, প্রতি মাসে নিলাম অনুষ্ঠান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পিছিয়ে পড়া মোংলা বন্দরে কর্মতৎপরতা বাড়াতে সরকারি কিছু প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি অসাধু চক্র নিয়মিত অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করছে। এসব কর্মকাণ্ডতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ছাড় করে নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন পণ্য আটক করে পুনঃকায়িক পরীক্ষা চালাচ্ছে। এতে বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতি চিহ্নিত করা হচ্ছে।

মোংলা কাস্টম হাউসের কর কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল-আমিন প্রামাণিক জানান, গত অর্থবছরে কাজের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে মিথ্যা ঘোষণা উদঘাটন থেকে জরিমানা ও অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৮৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা, যা এর আগে কখনো সম্ভব হয়নি। একই সময় বিগত সময়ের পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি থেকে আদায় হয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। শুল্কায়ন করে পণ্য খালাসের পর পুনরায় সে পণ্যের ওপর বর্ধিত কর আদায় করা হয়েছে নয় কোটি ১০ লাখ টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন থেকে আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোট রাজস্বের ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে শুধু কাজের স্বচ্ছতা আনায়ন খাত থেকে।

মোংলা বন্দরের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত গাড়ি আমদানি। বিগত অর্থবছরে মোট গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮০টি। গত মে মাসেই শুধু এসেছে দুই হাজার ৮৯৯টি গাড়ি। গত অর্থবছরে মধ্যে মোট গাড়ি খালাস হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৭টি।

একইভাবে গত অর্থবছর শেষে মোংলা বন্দরে শুল্ক জটিলতার কারণে খালাস না হওয়া গাড়ির সংখ্যা এক হাজার ১২৬টি, আমদানি নিয়ন্ত্রিত হওয়াই অ-খালাসকৃত গাড়ির স্যংখ্যা ৫৫৬টি ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই খালাসযোগ্য গাড়ি পড়ে আছে তিন হাজার ৬২টি। মোট চার হাজার ৫২৪টি গাড়ি আমদানি হলেও নানা কারণে খালাস হয়নি।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিগত অর্থবছরে মোংলা কাস্টম হাউসের বড় সফলতা এসেছে বন্ড হাউসের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের রাজস্ব ফাঁকি থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান শূন্য শুল্কে শুল্কযোগ্য পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে।

মোংলা কাস্টম হাউসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই কাস্টম হাউসের আওতাধীন বন্ড প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ৩৮৯ কোটি ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯২ টাকার শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনের দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এর আগে কখনোই এসব প্রতিষ্ঠান রাজস্ব ফাঁকি দিলেও তা উদ্ঘাটন হয়নি। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানে আমদানির প্রাপ্যতা সঠিকভাবে নিরূপণ করায় বন্ডের আওতায় আমদানি আগের চেয়ে এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। এতে শুল্কযোগ্য পণ্যের আমদানি বেড়েছে, যা বর্তমান শুল্ক প্রশাসনের একটি বড় সফলতা।

বন্ড প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রির প্রবণতা রোধ করতে পারায় একটি প্রভাবশালী মহল বর্তমান মোংলা কাস্টম হাউসের কর্মী সেটআপ পরিবর্তনের জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান শুল্ক প্রশাসনকে জামায়াত-শিবির বল্যে আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ ব্যবসায়ী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।