চাহিদা কমায় চিংড়ি রপ্তানিতে বিপর্যয়
আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমায় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউরো ও রুবলের মূল্যে বড় ধরনের নিম্নগামী প্রবণতা রয়েছে। পাশাপাশি তুলনামূলক কম দামে ভেনামি নামের এক জাতের চিংড়ি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি বেড়েছে। এতে গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি মাসে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, খুলনার সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল হাসান এনটিভিকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত চিংড়ির চাহিদা কমায় রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। তবে অন্য দেশগুলোর চেয়ে খুলনার বাগদার গুণগত মান উন্নত।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে খুলনার ২২টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের চিংড়ি রপ্তানি হয়। গত ডিসেম্বরে তা নেমে দাঁড়ায় ১১২ কোটি ১৬ লাখ টাকায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে ইউরো, রুবল ও ইয়েনের দাম পড়ে গেছে। এতে ইউরোপের আমদানিকারকরা চিংড়ি আমদানি কমিয়েছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি এম খলিলুল্লাহ। তিনি জানান, দেশের মোট চিংড়ি রপ্তানির ৬০ শতাংশই রপ্তানি হয়ে থাকে খুলনা অঞ্চল থেকে।
ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেল না কেনায় ডলারের বিপরীতে রুবলের বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এতে দেশটির আমদানিকারকরা আগের চেয়ে বেশি খরচে চিংড়ি আমদানি করতে চাইছেন না। দেশের মোট রপ্তানির ৬৫ শতাংশ ইউরোপের দেশগুলোতে হয়। রাশিয়ায় ৫ শতাংশ চিংড়ি রপ্তানি হয় বলে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে।
খুলনাঞ্চলের ২২টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের হিমাগারে প্রায় পাঁচ হাজার টন চিংড়ি মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ফ্রেশ ফুডের ৪৫৮ টন, জাহানাবাদ সি ফুডের ৩৬৬ টন, রূপসা ফিশের ১৮৪ টন, লকপুর ফিশের ২৬০ টন, বাগেরহাট সি ফুডের ৩২০ টন, সাউদার্ন সি ফুডের ২৭৪ টন ও শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ডস্টোরেজের ১৪৭ টন হিমায়িত চিংড়ি মজুদ রয়েছে।
ছবি ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাস্টিজের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল হক জানান, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ছয় মাস আগে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ছিল নয় ডলার। জানুয়ারিতে প্রতি কেজি ছয় ডলার করে বিক্রি হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দায় ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ইউরোপের ক্রেতারা ভেনামি নামক চিংড়ির দিকে ঝুঁকেছে। প্রতি কেজি ভেনামি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে চার ডলারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত বর্ধনশীল ভেনামির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না বাংলাদেশের চিংড়ি।