এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ টাকা

Looks like you've blocked notifications!

ঈদুল আজহা সামনে রেখে গত এক মাসে কয়েক দফা বেড়েছে মসলাজাতীয় সব পণ্যের দাম। এর মধ্যে মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি এলাচের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা।

শুধু এলাচ নয়, গত এক মাসে প্যাকেটজাত লবণের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১২ টাকা। চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা, আদা ৭০-৭৫ টাকা, সয়াবিন তেল ৫-৮ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা।

মসলার দাম বাড়া নিয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, ‘কোরবানির ঈদের সময় মসলার দাম কম-বেশি বাড়ে। এবারও কিছুটা বেড়েছে। তবে সব মসলার দাম বাড়েনি। আর শুধু মসলা নয়, চাহিদা বেড়েছে এমন কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আদা, রসুন ও এলাচের দাম বেশি বেড়েছে। মানভেদে এলাচের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত।’

আশরাফ আলী বলেন, মৌলভীবাজার ও খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের ওপর বাজারের দর-দাম নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার বাজার বাড়তির কারণেই দাম বেড়েছে বলে আমদানিকারকরা দাবি করছেন।’

আজ রোববার কারওয়ান বাজারে কয়েকজন ভোক্তার অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মসলার দাম বাড়িয়েছেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এটি করা হয়েছে।

নাইমুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রায় সব মসলারই দাম বেড়েছে। বাজারে মনিটরিং নেই। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। একই পণ্য দোকানভেদে দাম ভিন্ন।

মসলার দাম বাড়ায় কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী বলেন, ‘ঈদে মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াতে সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও কিছুটা সুযোগ নেন। কোনো সিন্ডিকেট মসলার বাজার থেকে যাতে অযৌক্তিক মুনাফা নিতে না পারে, সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক মনিটরিং টিম কাজ করছে।’

শওকত আলী ওয়ারেছী আরো বলেন, ‘ঈদুল আজহায় চোরাই পথে মসলা আমদানি বন্ধ ও চামড়ার পাচার রোধে করিডর ও সীমান্তে বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে স্পেশাল মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক মাসে আদার দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। বর্তমানে পণ্যটি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এক মাস আগে পণ্যটি কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৫০-১২০ টাকায়। জিরার দাম প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ, আয়োডিনযুক্ত লবণ ১০ শতাংশ ও এলাচ ১১ শতাংশ দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, কোরবানিতে মসলার চাহিদা বেশি থাকে। যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সময় গরম মসলার চাহিদা কয়েক গুণ বাড়ে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারে মসলার দাম নির্ধারিত হয়। ঈদের সময় বিশ্বের সব দেশেই মসলার চাহিদা ও দাম বাড়ে।

বিভিন্ন মসলার বাজারদর

রাজধানীর মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রায় সব মসলার দাম বেড়েছে। প্রতিটি পাইকারি দোকানে মসলার দামে তারতম্য লক্ষ করা গেছে।

এলাচ : বাজারে সাধারণত সাত-আট ধরনের এলাচ পাওয়া যায়। রাজধানীর পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ুর এলাচ এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতের এসব এলাচের প্রতি কেজির দাম এক মাস আগে ছিল এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। গুয়াতেমালার এলাচ এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই এলাচ এক মাস আগে ছিল এক হাজার ১০০ টাকা।

আদা : দুই মাস আগে আদার দাম কম থাকলেও বন্যার অজুহাতে পণ্যটির দাম বাড়ে। গত এক মাসে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। বর্তমানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে দেশি আদা ১৩০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ১১০ টাকা ও চীনের আদা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জিরা : পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৮০ টাকা। খুচরা বাজারে কেজিতে ৩০-৪৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দেশে সাধারণত ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও মিসর থেকে জিরা আমদানি হয়। মোট চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ চাহিদা মেটায় ভারত।

লবঙ্গ : প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায়। এক মাস আগে ছিল এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা। দাম বাড়লেও অল্প ব্যবহারের কারণে তেমন প্রভাব পড়েনি ক্রেতাদের মধ্যে।

দারুচিনি : চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা দারুচিনি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকায়। এক মাস আগে এর দাম ছিল ২৬০-২৭৫ টাকা। গতকাল শনিবার মৌলভীবাজারে চীন ও ভিয়েতনামের দারুচিনির কেজি ছিল ২৭৬-২৭৮ টাকা।

রসুন : কয়েক মাসের ব্যবধানে কয়েক দফা রসুনের দাম বেড়েছে। মাঝে একটু কমলেও গত মাস থেকে আবারও বাড়ে পণ্যটির দাম। এখন প্রতি কেজি মানভেদে দেশি রসুন বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ২৫০ টাকায়। আমদানীকৃত রসুনের প্রতি কেজি ছিল ১৯০-২৪০ টাকা।

এ ছাড়া হলুদ প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা, মরিচ ১৫০-১৯০ টাকা, ধনে ১৮০-২০০ টাকা ও তেজপাতা ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে ৩৮-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।