চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট?

Looks like you've blocked notifications!

লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে চালের দাম। নিম্ন আয়ের মানুষ চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারে মোটা চালের দামই কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী চাল মজুদ করে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। আর এতে করে সিন্ডিকেটের কাছে চলে যাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে মিল মালিকরা এসবের জন্য দায়ী করেছেন সরকারের অব্যবস্থাপনাকে।

রাজধানীর চালের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আর গুটি, স্বর্ণা, পারিজাসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।

বাজারে স্বর্ণা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪১ টাকা, পারিজা ও বিরি-আটাশ ৪০ থেকে ৪২, ঊনত্রিশ ও আটাশ ৪২ থেকে ৪৩, মিনিকেট ৫০ থেকে ৫২, নাজিরশাইল ৫৩ থেকে ৫৫ এবং বাসমতী ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর যাঁরা পোলাওয়ের চাল নিতে চান, তাঁদের প্রতি কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।

রাজধানীর চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজারে স্বর্ণা ও পারিজা বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) এক হাজার ৮০০ টাকা, ঊনত্রিশ ও আটাশ বস্তাপ্রতি এক হাজার ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দামের পার্থক্য ঊনত্রিশ ও আটাশ চার টাকা আর স্বর্ণা ও পারিজা পাঁচ টাকা।

শান্তিনগর বাজারের চাল ব্যবসায়ী তারেক বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হয়। কারণ, কেরিং খরচ, দোকান ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতন হিসাব করলে আমাদের তেমন একটা থাকে না। এর মধ্যেই আমাদের ব্যবসা করতে হয়।’

বাবুবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন জানান, চালের বাজার এখন স্থিতিশীল আছে। এখানে মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে আসবে। এ সময়ের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করবে।

আরামবাগ বাজারে কথা হয় চাল ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী হালিমের সঙ্গে। তিনি জানান, সরকার বলছে, পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে। তাহলে কয়েক মাস থেকে চালের বাজার অস্থির কেন? তিনি চালের বাজার মনিটর করার দাবি জানান।

শান্তিনগর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে চালের দাম বেড়েছে, যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজারটাকে জিম্মি করে রাখে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘দেশে চালের দাম বাড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মিল এলাকায় কোনো ধরনের চালের দাম বাড়েনি; বরং প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা কমেছে।’ খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজিতে চার থেকে সাত টাকা বেশি দরে ক্রেতার কাছে বিক্রি করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

লায়েক আলী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছিলাম যে, আপনাদের ভোক্তা অধিদপ্তর ও অনেক এক্সপার্ট (দক্ষ) আছে, এরা কখনো বাজার মনিটরিং করে না। তারা যদি দেখত চালের মিলে, আড়ত এবং খুচরা বাজারে কোথায় কত টাকা দরে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা হলে আসল সমস্যার সমাধান হতো।’

সিন্ডিকেটে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে যখন চালের বাজার অস্থির, তখন তাদের পক্ষেই সাফাই গাইলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) জহির উদ্দিন আহমেদ এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটর করছি। মোটা চালসহ আন্যান্য চালের দাম বেড়েছে। এখন দাম বাড়লে কৃষকরা পাবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করে না।’ মনিটরিংয়ের কাজ কী—এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সচিব।