বাজেটে বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা গুরুত্ব পাবে : অর্থমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ছবি : এনটিভি

আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যাঞ্জক বাজেট হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও বেশকিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি।

আজ রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে সভাটির আয়োজন করে। 

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রমুখ। 

বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব মন্তব্যে করে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।

আমাদের সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদহার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। আমাদের এই পদক্ষেপগুলো আরও কীভাবে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। 

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইএফডিএমএসের মাধ্যমে মূসক জাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, সহজ ও দ্রততম সময়ে সেবা প্রদান, কার্যকর অবকাঠামোগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আশা করি এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যাঞ্জক বাজেট হবে। 

মতবিনিময় সভায় আয়কর, মূসক, আর্থিক খাত, অবকাঠামো, শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে ডিসিসিআইয়ের নেতারা বলেন, করদাতা নিবন্ধন বাড়লেও সেহারে রিটার্নের সংখ্যা বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কর প্রদান ব্যবস্থা আরও সহজীকরণ করতে হবে। আবার একটি টেকসই আর্থিক খাতের জন্য বেশকিছু আইন ও নীতির সংস্কার প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আর্থিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণসহ খেলাপী ঋণ কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, রিজার্ভের ঘাটতি কমানো, ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও তারল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্য, সেবা এবং বাজার বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। তাই রপ্তানীমুখী খাতসহ কৃষি, চামড়া, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি ও অন্যান্য উদীয়মান খাতের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদান প্রয়োজন। সভায় ডিসিসিআই একগুচ্ছ দাবিদাবা তুলে ধরেন। এগুলো হলো-   

আয়কর ও মূসক সম্পর্কিত দাবিগুলো হলো- আয়কর আইন-২০২৩ এর ধারা ১৬৩ (২)(খ) হতে ধারা ৯০কে অব্যাহতি দেওয়া; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল এবং অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল হইতে উদ্ভূত আয়কে সরকারি কর্মচারীদের অনুরূপ করমুক্ত রাখা; উপযুক্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন সাপেক্ষে সব ব্যবসায়িক খরচের সম্পূর্ণ অংশ বিয়োজনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা রাখা; ১৬২(১) ধারায় করদিবসের পূর্বে রিটার্ন দাখিল করা না হইলে, ৫০ শতাংশ অধিক হারে সুদ গ্রহণের বিধান বাতিল করা; মূসক আইনের ধারা ৪৬ (২) (ক) কে এ ধারা থেকে প্রত্যাহার করে সব উপকরণ ব্যয়ের জন্য রেয়াত প্রদান; ধারা ৬৮, ৬৯, ৭০ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার ফেরত প্রদানের পরিবর্তে প্রকৃত প্রাপ্য ফেরত প্রদান করা; আপিল দায়েরকালে বিতর্কিত আদেশে উল্লিখিত দাবিকৃত করের ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হ্রাস করা। 

আর্থিক খাত সম্পর্কিত দাবিগুলো- মন্দ ঋণ কমানোর জন্য আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আরবিট্রেশন আইন বাস্তবায়ন ও এসেস্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব প্রদান করা; বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিএমএসএমই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের অবশিষ্ট ফান্ড সহজ শর্তে বিতরণ; বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি; দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য পুঁজিবাজারের মাধ্যমে প্রিমিয়াম সরকারি বন্ড, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করন। 

অবকাঠামো সম্পর্কিত দাবিগুলো হলো- আকর্ষণীয় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো পিপিপির অধীনে বাস্তবায়ন এবং প্রকল্পগুলো অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ভিএফএম বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা; দীর্ঘমেয়াদী বন্ড, সিকিউরিটিজেশন বা মিনোরিটি ইক্যুইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অবকাঠামোর জন্য পুঁজিবাজার থেকে সরাসরি অবকাঠামো ঋণ বা ইক্যুইটি সংগ্রহ করা; অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করণে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করা; শিল্পক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। 

শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কিত দাবিগুলো হলো- শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডব্লিউটিও গ্রিন বক্সের মাধ্যমে বিকল্প সহায়তা। যেমন- অবকাঠামো, গবেষণা ও উন্নয়ন সহায়তা, উদ্ভাবন তহবিল, এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিং, এক্সপোর্ট ক্রেডিট ও বীমাসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; পাটখাতের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক ভিসকস প্রক্রিয়াকরণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এ খাতের রপ্তানি বহুমুখীকরণে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের আমদানি খরচ বাঁচাতে ব্যাকওর্য়াড লিংকেজকে শক্তিশালী করাসহ মোল্ড এবং ডাই স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করতে বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়া; সিএমএসএমইসহ সকল উৎপাদনশীল খাতে আইপিআরের ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয় সে সকল খাতের আইপিআর বাস্তুতন্ত্র প্রস্তুত করণে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়ন করা; এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে সকল রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বজায় রাখতে ইএসকিউ, ইএসজি সম্মতি নিশ্চিতে বাজেট সহায়তা প্রদান।