চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.১ শতাংশ : এডিবি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) প্রকাশিত এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে এবং আগামী অর্থবছরে এটি বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির উন্নতি এবং পর্যটন পুনরুদ্ধারের মধ্যে এই অঞ্চলের স্থিতিস্থাপক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো এই বছর গড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এডিবি প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) অনুযায়ী, আগামী বছরও একই হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
গত দুই বছর ধরে অনেক অর্থনীতিতে উচ্চতর খাদ্যের দাম বাড়ার পরে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি মাঝারি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও রপ্তানির দ্বারা চালিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সম্পত্তির বাজারে দুর্বলতা এবং কম খরচের কারণে চীন মন্দার ভারসাম্য রক্ষা করছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত একটি প্রধান প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, এই বছর ৭ শতাংশ এবং পরের বছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। চীনের প্রবৃদ্ধি গত বছর ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে এই বছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পরের বছর ৪ দশমিক ৫ শতাংশে এ নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালবার্ট পার্ক বলেন, ‘আমরা চলতি বছর ও আগামী বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার বেশিরভাগ অর্থনীতির শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।’
অ্যালবার্ট পার্ক বলেন, ‘ভোক্তাদের আস্থা উন্নত হচ্ছে এবং বিনিয়োগ সামগ্রিকভাবে স্থিতিস্থাপক। বাহ্যিক চাহিদাও কমে আসছে বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে।’
নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ বেশ কয়েকটি ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্ন, মার্কিন আর্থিক নীতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা, চরম আবহাওয়ার প্রভাব এবং চীনে সম্পদ বাজারের আরও দুর্বলতা।
উন্নয়নশীল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি এই বছর ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং আগামী বছর ৩ শতাংশে এ নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ বিশ্বব্যাপী মূল্যের চাপ হ্রাস পাবে এবং অনেক অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি কঠোর থাকবে। তবে চীন বাদে এই অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি এখনও কোভিড-১৯ মহামারির আগের চেয়ে বেশি।
চালের দাম খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে আমদানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য। এডিবির তথ্য অনুসারে, এ বছর চালের দাম বাড়তে পারে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি এবং চাল রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধও এর অন্যতম কারণ। লোহিত সাগরে জাহাজের ওপর হামলা এবং পানামা খালে খরার কারণে বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে।
এডিবির পরামর্শ হলো চালের ক্রমবর্ধমান দাম মোকাবিলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সরকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি দিতে পারে এবং মূল্য হেরফের ও মজুতদারি রোধে বাজারের স্বচ্ছতা ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে পারে। মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি নীতিতে মূল্য স্থিতিশীল করার জন্য কৌশলগত চালের মজুদ প্রতিষ্ঠা, টেকসই চাষ ও ফসল বৈচিত্র্যকরণকে উৎসাহিত করা এবং উত্পাদনশীলতা বাড়াতে কৃষি প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
আঞ্চলিক সহযোগিতা চালের দাম এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।