এস আলম থেকে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারের দাবি গ্রাহক ফোরামের
তদন্ত করে এস আলমের নামে ও বেনামে বিনিয়োগের রিপোর্ট প্রস্তুত করে, তা আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন শরীয়াভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং গ্রাহক ফোরাম। একই সাথে এস আলমের কাছে ইসলামী ব্যাংকের পাওনা টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি রাখেন।
আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীতে হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে “শরীয়াভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা অবৈধ প্রভাব থেকে রক্ষার লক্ষ্যে গ্রাহক সমাবেশ” শীষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে গ্রাহক ফোরাম এসব দাবি করেছন।
এস আলমের দুর্নীতি বর্ণনা করে ব্যাংকটির রক্ষায় গ্রাহক ফোরাম বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি হলো- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা সহ সকল পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা; বিস্তারিত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে এস. আলম কর্তৃক ব্যাংক থেকে নামে ও বেনামে নেওয়া বিনিয়োগের একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা এবং ব্যাংকের পাওনা টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা; অবৈধ উপায়ে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা ফলে তাদেরকে অনতি বিলম্বে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড থেকে প্রত্যাহার করে পূর্বের বোর্ড সদস্যদের দিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন দাবি। দখলের আগের অবস্থায় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা; ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা। দক্ষ ও ভাল বিনিয়োগ করা গ্রাহকরা যাতে পূর্বের মতো যথাযথ বিনিয়োগ নিয়ে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারে তা নিশ্চিত করা; ডিপোজিটারদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে দেওয়া গ্রাহক ফোরামের এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, যে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্নে বেশিরভাগ বিদেশি বিনিয়োগ বা শেয়ারের মাধ্যমে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, সৌদি আরবের আল-রাজি গ্রুপ ও ব্যক্তি, দুবাই ইসলামী ব্যাংক, বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক, মিনিটি অব কুয়েতে আওকাফ ও অন্যান্য ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিদেশি উদ্যোক্তাদের শেয়ার ছিল প্রায় ৭২ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকের ডিপোজিট গ্রাহক সংখ্যা দেড় কোটিও উপরে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এক সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ব্যাংক রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা বিশেষ করে রেডিমেইড গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুন্না আয়ের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সাথে সাথে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্সের ৩০ শতাংশের বেশি এ ব্যাংক এর মাধ্যমে দেশে আসত যা বর্তমানে ২৩ শতাংশ নেমে এসেছে। এ আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ এ বড় অবদান রেখেছিল।
তাছাড়া অন্যান্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সিএসআর, গ্রামীণ পল্লী বিনিয়োগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের আইন কানুন পরিপালন, আর্থিক স্বচ্ছতা ও গ্রাহক সেবার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে এ ব্যাংক যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিল। ২০১২ সালে এই ব্যাংক যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল ম্যাগাজিন দি ব্যাংকার কর্তৃক বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের এক মাত্র ব্যাংকের মর্যাদা লাভ করে। উপরোক্ত অসাধারণ অর্জনের পর ২০১৬ সালে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে সদ্য বিদায়ী সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ এবং জানুয়ারি ২০১৭ সালে রাষ্ট্রীয় বিশেষ সংস্থা সরাসরি হস্তক্ষেপে জোর পূর্বক ব্যাংকটি দখল করে নেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কোন শেয়ার ছিল না। অথচ বর্তমানে তার পরিবারের সদস্য ও বেশ কয়েকটি অস্তিত্বহীন কোম্পানি সহ এ গ্রুপের মোট শেয়ার প্রায় ৮২ শতাংশ। ইতোমধ্যে দেশি ও বিদেশি শেয়ার হোল্ডাররা হতাশ হয়ে এবং এ গ্রুপ কর্তৃক চাপে পড়ে তাদের প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ওই গ্রুপের দখলের পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে যথাযথ পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া ও পলিসির বাইরে গিয়ে ৯ হাজারের অধিক কর্মচারী কর্মকর্তা অবৈধ ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন যাদের মধ্যে বেশির ভাগই অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ। এছাড়া বিভিন্ন শাখায় ও প্রধান কার্যালয়ে ওই গ্রুপের অনুগত বিভিন্ন পর্যায়ের অসৎ কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে অবৈধভাবে নামে বেনামে অনিয়ম করে বিনিয়োগের নামে জনগণের টাকা লুটপাট করেন। বর্তমানে ওই গ্রুপের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এমতাবস্থায় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে যে সকল বিনিয়োগ গ্রাহক সুনাম ও দক্ষতার সাথে ব্যাংকের সহায়তায় ব্যবসা করে আসতেছিলেন তারাও এ দুর্নীতির কারণে মারাত্মকভাবে গত ৮ বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ, সব টাকাই গ্রুপটির নামে-বেনামে লুটপাট করে নিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে প্রকৃত গ্রাহকরা তাদের মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলোর সূত্র মতে আমরা জানতে পারি যে, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভায় ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংক সহ ওই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা সকল ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ ভেঙে নূতন করে ইন্ডিপেনডেন্ট বোর্ড মেম্বার নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এস আলম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বোর্ড বাতিল করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ইন্ডিপেনডেন্ট ডাইরেক্টর দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়। বর্তমান পেক্ষাপটের আলোকে আমাদের প্রত্যাশা সকলের গ্রহণযোগ্য সৎ নিষ্ঠাবান একজন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করে বোর্ড পুনঃ গঠন করা।