নতুন ১০ টাকার নোটে মুনাফা ৭০ শতাংশ, দুই টাকায় শতভাগ

ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দকে কয়েকগুন বাড়িয়ে নতুন টাকার কচকচে নোট। এই লক্ষে ঈদে নতুন টাকার নোট পাওয়ার লোভ শিশু থেকে বৃদ্ধের সবাই থাকে। সে কারণে ঈদের আগেই নতুন নোট পেতে ব্যাংকগুলোতে ভিড় করে গ্রাহক। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যংক ঘোষণা দিয়েছে, এবারে ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট বিনিময় করা হবে না। ব্যাংকে এরারে ঈদে নতুন টাকার নোট বিনিময় না করায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। ব্যাংকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে নতুন টাকার নোট প্রত্যাশীরা এখন বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে রাজধানীর ফুটপাতে। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার মতিঝিল ও গুলিস্তানে আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রকাশ্যে বেচাকেনা করছে নতুন টাকার নোট। যেখানে দশ টাকার নতুন নোটের একটি বান্ডিল (১০০টি) বেচা হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ সেখানে ১০ টাকার নতুন ১০০টি কচকচে নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৭০০ টাকা বা ৭০ শতাংশ। আর ২০ টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৮০০ টাকা বা ৪০ শতাংশ। দুই টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ২০০ টাকা বা ১০০ শতাংশ। একইভাবে পাঁচ টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৩০০ টাকা বা ৬০ শতাংশ। পঞ্চাশ টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৪০০ টাকা বা আট শতাংশ। ১০০ টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৪০০ টাকা বা চার শতাংশ। পাশাপাশি ২০০ টাকার নতুন ১০০টি নোট পেতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বেশি ৪০০ টাকা বা দুই শতাংশ।
মতিঝিলে কথা হয় নতুন টাকা কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরীজীবি তন্ময় হোসেনের সঙ্গে। ব্যাংকে নতুন নোট না পেয়ে আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের ঈদ আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে নতুন নোট। তাই নতুন নোট কিনতে এখানে আসা। কিন্তু এখানে এসে দেখছি দুই, পাঁচ ও দশ টাকার নতুন নোটের দামে আগুন লেগেছে। এতো বেশি দাম চাচ্ছে, কিনতে সাহস মিলছে না। কিন্তু কিনতে হবে, কারণ বাচ্চারা নতুন টাকার নোট পেলে খুব খুশি হয়। তাই তাদের খুশি মানেই আমরা খুশি।
গুলিস্তান থেকে এক হাজার ২০০ টাকা বেশি দিয়ে তিনটি বান্ডিল (দুই, পাঁচ ও দশ টাকার নোট) কিনলেন ব্যবসায়ী ইউসুফ ইব্রাহিম। নতুন নোট পেলে সবাই মুখেই ঈদের আমেজ দেখা মিলে জানিয়ে তিনি বলেন, চিন্তা করুন ডাবল টাকা দিয়ে দুই টাকার নতুন নোটের একটি বান্ডিল কিনতে হয়েছে? এমনদিন আসবে চিন্তা করিনি। আরও বলেন, ১০ টাকার নতুন নোটের একটি বান্ডিল (১০০টি) কিনতে হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে। আর পাঁচ টাকার নতুন নোটের একটি বান্ডিল (১০০টি) কিনতে হয়েছে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে।
এতো দামে কেন নতুন নোট বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নে মতিঝিলের একাধিক অবৈধ টাকা ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের দুই, পাঁচ, ১০ ও ২০ টাকার চাহিদা বেশি। এসব নোটে গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। বিভিন্ন হাত হয়ে ব্যাংক থেকে আমাদের কাছে টাকা আসে জানিয়ে তারা বলেন, অনেক বেশি অর্থ দিয়ে এবার নতুন নোট কিনতে হয়েছে। প্রতি বান্ডিলে আমাদের ৭০ থেকে ১০০ টাকা লাভ করতে পাচ্ছি। বাজার ভাল থাকলে প্রতি বান্ডিলে ১৫০ টাকা লাভ করতে পাচ্ছি। এর বেশি না।
মতিঝিলের টাকা বিক্রেতা নারী ব্যবসায়ী বলেন, দুই টাকার বান্ডিলের নতুন নোট আমাদের ১৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ১০ টাকার বান্ডিলের নতুন নোট ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি ২০ টাকার বান্ডিলের নতুন নোট আমাদের কিনতে হয়েছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে। এরপর সামান্য লাভে আমরা বিক্রি করছি নতুন নোট।

কিভাবে নতুন নোট এখানে আসছে, কারা বিক্রি করছে এসব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতো বলা যাবে না। সাহেবরা আমাদের দিয়ে যায়, আমার অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনছি। সামনে টাকা আরও বেশি দামে কিনতে হবে জানিয়ে গুলিস্তানের ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, বাজারের নতুন নোটের চাহিদা অনেক। আনা মাত্র সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। চাহিদা বাড়লে সামনে ১০ ও ২০ টাকার নোট ডাবল দামে কিনতে হবে।
নতুন টাকা বেশি দামে কেনাবেচা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। আমাদের দেশে নতুন টাকা ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নতুন টাকা বাজারে নির্ধারিত মূল্যে ছাড়ার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরবরাহ করে। ব্যাংক থেকে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে নতুন টাকা বেচাকেনা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের মুদ্রা আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নিয়মাবলীর আওতায় নতুন টাকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যেকোনো অনৈতিক বা অবৈধ লেনদেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এই অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড হতে পার।