লাখপতির গল্প
শাশুড়ির গুণে ভার্জিন নারকেল তেল বেচে লাখপতি দুই জা
দুই জা সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম। অনলাইনে নারকেল তেল বেচে লাখপতি বনে গেছেন তাঁরা। এ সেক্টরে তাঁরা কাজ করছেন খুব বেশি দিন নয়। এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এই দুই উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান—আলাই অর্গানিক অ্যান্ড হোমমেড গুডস।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুমের। জানান নিজেদের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কত দিন ধরে এ সেক্টরে কাজ করছেন আর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে দুই উদ্যোক্তার যৌথ বয়ান, ‘যৌথভাবে আমাদের উদ্যোগ। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম আলাই অর্গানিক অ্যান্ড হোমমেড গুডস (Aalai Organic And Homemade Goods)। আমরা ঢাকা জেলা থেকে এক বছর ধরে কাজ করছি। আমাদের উদ্যোগ মূলত শুরু হয় চুলের জন্য নারকেল তেল নিয়ে। আমরা দুজনের বিয়ের পর থেকেই আমাদের শাশুড়ি মায়ের হাতে বানানো নারকেল তেল দিয়ে বেশ উপকার পেয়েছি। সেই জায়গা থেকেই আমাদের নারকেল তেল নিয়ে কাজ করার চিন্তা শুরু। এ ক্ষেত্রে আমাদের হাজব্যান্ডদের সহযোগিতা ও আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। আমরা প্রথমে আমাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের উদ্যোগের কথা জানাই আর সেখান থেকেই আমরা যথেষ্ট সাড়া পাই। এর পাশাপাশি আমরা খাওয়ার জন্য এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড নারকেল তেলের কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।’
তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা যখন এক্সট্রা ভার্জিন সবার সামনে আনলাম, তখন অনেকেই এ সম্পর্কে জানত না। আবার গুটিকয়েক যারা জানত, তারা বিদেশি কোল্ড প্রেসড নারকেল তেলই ব্যবহার করত বেশির ভাগ। এ ক্ষেত্রে তখন আমরা এমন কিছু মানুষের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি, যারা এই তেলে অভ্যস্ত ছিল। আবার আমাদের কাজ শুরুর কিছুদিন পর থেকেই করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়। আর তখন অনেকেই কোল্ড প্রেসড নারকেল তেলের দিকে ঝুঁকছিলেন এর গুণাগুণের জন্য। সে ক্ষেত্রে আমরা কোল্ড প্রেসড নারকেল তেলের জন্যই বেশি সাড়া পাচ্ছিলাম।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম বলেন, ‘পরিবার থেকে সাড়া পাচ্ছি বলতে, পরিবার পাশে আছে বলেই নারকেলের মতো এত কঠিন জিনিস নিয়ে কাজ করতে পারছি আমরা।’
আর কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, বিক্রিই বা কেমন? এনটিভি অনলাইনের এমন প্রশ্নে সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম বলেন, ‘আমরা মূলত উদ্যোগ শুরু করেছিলাম নারকেল তেল নিয়ে। এর কিছুদিন পরেই আমরা নারকেলের নাড়ু, বরফি, নারকেলের আটা (গুঁড়া) ও সুগার-ফ্রি পিনাট বাটার। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের এখন পর্যন্ত দুই লাখের ওপর সেল হয়েছে, এর মধ্যে আমাদের মোস্ট সেলিং পণ্য হচ্ছে এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড নারকেল তেল ও নারকেলের নাড়ু।
উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল? সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম বলেন, ‘নারকেল বাসায় নিয়ে আসতে আমাদের হাজব্যান্ডরাই মেইনলি সহায়তা করে। কিন্তু উদ্যোক্তা-জীবনের শুরুর দিকে একবার আমাদের ওরা সময় দিতে পারছিল না ওদের ব্যস্ততার জন্য। তখন আমরা দুই জা মিলে নিজেরাই নারকেলের আড়তে যাই, সেখান থেকে নারকেল নিয়ে ফেরত আসতে অনেক রাত হয়ে যায় এবং সেই রাতেই এর থেকে তেল বানিয়ে কাস্টমারকে পাঠাই ও কাস্টমার যথা সময়ে তেল হাতে পেয়ে ভালো ফিডব্যাক জানায়। সেই মুহূর্তটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না যে কতটা মধুর ছিল। আমাদের উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হতে পরিবারের ভূমিকা ও কাস্টমারের সাপোর্ট আমরা সব সময়ই পেয়েছি।’
উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? তাঁরা বলেন, ‘আমরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে সংসার নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। অবশ্যই নারী হিসেবে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা বর্তমান সমাজে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমাদের পুরো পরিবারের সহযোগিতায় আমাদের নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা সহজ হয়েছে। আর আমাদের অনুপ্রেরণার মূলে ছিল আমাদের হাজব্যান্ড ও আমাদের শাশুড়ি মা।’
উই-এর ফেসবুক গ্রুপ আপনার উদ্যোক্তা-জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে? এ দুই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমরা শুরুতেই উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এত সুন্দর একটি দেশীয় পণ্যের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য। গত বছর যখন পুরো পৃথিবী করোনায় আক্রান্ত ছিল, তখন আমাদেরও সবার মতো কাজ বন্ধ ছিল। তখন আমরা উই-এর দেখা পাই এবং আমরা আমাদের কোল্ড প্রেসড নারকেল তেল নিয়ে লেখা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ছয় মাসেই লাখপতির খাতায় নাম লেখাতে সক্ষম হই। উই-এর মাধ্যমে আমাদের আলাই অর্গানিককে সবাই সহজেই চিনতে পারে এখন। আমাদের দেশে এখনও নারীদের ঘরে-বাইরে কাজ করতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সে ক্ষেত্রে উই-এর মাধ্যমে অনেক নারী নিজের ঘরে বসেই নিজের কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আর এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে আমরা মনে করি। নারী উদ্যোক্তারা যে দেশের মধ্যেই সীমিত আছে তা নয়, উই-এর হাত ধরে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করার ও দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে।’
আগামী দিনের পরিকল্পনা কী? সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম বলেন, ‘আগামী দিনের পরিকল্পনা বলতে খাঁটি পণ্য নিয়ে আমাদের পথ চলা শুরু, আর এই খাঁটি পণ্য খুব সহজেই সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া আলাইকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপনের জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনারা হতে পেরেছেন? সাদিয়া ইসলাম ও তাসরিফা তাবাসসুম বলেন, ‘হ্যাঁ, লাখপতি হয়েছি। কিন্তু আমরা একদিনে লাখপতি হতে পারিনি। এর জন্য আমাদের অনেক শ্রম দিতে হয়েছে, রাত জেগে কাজ করেছি, বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা চালিয়েছি, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়েছে আমাদের। তবেই ক্রেতা বেড়েছে, তাদের আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি আমরা। এভাবেই আমরা সফলতা পেয়েছি ধীরে ধীরে। আর এই সফলতা আমরা উই-এর হাত ধরেই পেয়েছি।’