লাখপতির গল্প
শখে শুরু, ১২ দিনে লাখপতি মৌ!

২০২০ সালের মার্চ থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। শুরুটা শখের বশে হলেও এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। মেয়েদের পোশাক বেচে অল্প দিনেই বনে যান লাখপতি। তাঁর অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—এমজে ফ্যাশন মার্ট।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কেমন আছেন, কুশল জানতেই মৌ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি। আমার ব্যস্ততা সংসার, সন্তান আর উদ্যোগ নিয়ে। ২০২০ সাল থেকে আমার উদ্যোগের যাত্রা শুরু। ২০১৩ সালে অনলাইন থেকে কেনাকাটা শুরু করি। কখনও ভাবিনি অনলাইনে কিছু করব। আমার শুরুটা শখের বশে ছিল। সবাইকে দেখতাম আর চিন্তা করতাম আমিও অনলাইনে কিছু একটা করব। তার পর ২০২০ সালে কাজে নেমে পড়ি।’

করোনাকালের শুরুর দিকে মৌয়ের শুরু। তাঁর ভাষ্যে, ‘তখন করোনায় সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। বাসায় বসে চিন্তা করলাম অনলাইনে কিছু একটা করি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে আমি বিজনেস শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, শুরু থেকে অনেক সাড়া পেয়েছি এবং উই-এ (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) আমি প্রথম ১২ দিনে লাখপতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলাম।’
মৌ মূলত দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। নারীর পোশাক মেলে তাঁর এমজে ফ্যাশন মার্টে। দেশীয় পোশাক যেমন ব্লক, বাটিক, মনিপুরি, জামদানি নিয়ে কাজ করছেন। গেল দেড় বছরে প্রায় ২৭ লাখ টাকার পোশাক বেচেছেন মৌ।
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? সাদিয়া ইসলাম মৌ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার পরিবার আমাকে অনেক সাপোর্ট করছে। আমি যখন উদ্যোগ শুরু করি তখন আমার বেবি অনেক ছোট ছিল। অনলাইনে অনেক অ্যাকটিভ থাকতে হতো। যখন আমি কাজে ব্যস্ত থাকতাম আমার শ্বশুর ও স্বামী বেবিকে সময় দিত আর আমি কাজ করতাম। পরিবারের শতভাগ সাপোর্ট ছিল বলেই আজ আমি উদ্যোক্তা হতে পেরেছি। আমার শ্বশুর নিজের কাজ রেখে আমার ছেলেকে দেখাশোনা করতেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব ভাগ্যবতী এমন পরিবারের বউ হতে পেরে।’

উই-এর ফেসবুক গ্রুপ মৌয়ের উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উই বাংলাদেশের নারীদের নতুন করে জন্ম দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। উই-এর সাথে আমার পথ চলা ২০২০ সালের মার্চ থেকে। তখন আমি সাইলেন্ট মেম্বার ছিলাম। মাঝে কোনও একটা কারণে গ্রুপটা ছেড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার চলে আসি প্রাণের গ্রুপে মে মাসে। গ্রুপে সবার পোস্ট পড়তে শুরু করলাম। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, আমাকে দিয়ে হবে কিছু একটা। মাত্র এক হাজার টাকা, অল্প পুঁজি দিয়ে অনলাইন বিজনেস শুরু করলাম। সাথে সাথে খুলে ফেললাম ফেসবুক পেজ। উই থেকে শিখতে শুরু করলাম কীভাবে পেজ, নিজের ফেসবুক আইডি কাজে লাগানো যায়। আজ হাজার হাজার নারী উই-এর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।’
উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? মৌ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অনেক বেশি ভালো লাগছে। নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পারছি। আমাকে হাজার হাজার মানুষ এখন চিনছে-জানছে। আমার অনুপ্রেরণা ছিলেন নাসিমা আক্তার নিশা আপু। আপুর পোস্ট পড়ে অনুপ্রেরণা পাই।’
লাখপতি হতে অন্যদের কী করা উচিত বলে মনে করেন? মৌয়ের পরামর্শ, ‘পণ্যের মান ভালো রেখে সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে। কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে হবে। ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। পারসোনাল ব্র্যান্ডিং মজবুত করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি দ্রুত লাখপতি হতে পারে বলে আমি মনে করি।’
মৌয়ের ইচ্ছে, নিজের ব্যবসাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নিজের উদ্যোগকে বড় করা। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় নিজের পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন, এবার দেশের বাইরে পৌঁছাতে চান। মৌয়ের স্বপ্ন পূরণ হোক, সে প্রত্যাশা সবার।