আদালতের রায়ের আগে রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে তড়িঘড়ি

Looks like you've blocked notifications!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত রায়ের আগেই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন। আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের বাসভবনের দপ্তরে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯৬তম সিন্ডিকেট সভার বৈঠক ডাকা হয়েছে। অথচ আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে আদালত চূড়ান্ত রায় প্রদানের দিন ধার্য করেছেন।

বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির অধিকাংশ সদস্যের অভিযোগ, প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। রায়ের আগে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তড়িঘড়ি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ জন্য সকালে নিয়োগ বোর্ড ডেকে সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।

ক্রপ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানান, ২৪ তারিখ শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বসার কথা ছিল; কিন্তু পরে তা স্থগিত করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দীনের আমলে তিনটি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্ল্যানিং কমিটি প্রভাষক পদে প্ল্যান্ট প্যাথলজি, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং ও এগ্রোনমি/এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ৩৮টি আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে পরে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

তবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের আবেদন বহাল রেখে গত বছরের ৩০ জুলাই নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বর্তমান প্রশাসন। কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে প্ল্যানিং কমিটিকে না জানিয়েই প্রভাষক পদে আবেদনের জন্য উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে ‘এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি’ বিষয় যুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে ৪৭টি আবেদন জমা পড়ে। নতুন করে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আসগর।

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ আগস্ট বিভাগটিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার বিবাদী রাবি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কৃষি অনুষদের ডিন, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেন বিচারক শেখ হাসান আরিফ ও মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ১৫ জানুয়ারি শুনানি শেষে আদালত ২৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

মামলার চূড়ান্ত রায়ের আগে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ মন্তব্য করে বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘গত ১৫ জানুয়ারি মামলার শুনানি শেষে আদালত ২৭ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছেন। আদালত সেই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবীকে বলেছেন আদালতের রায়ের পূর্বে প্রশাসন যেন কোনো কিছু প্রসিড না করে। আর প্রসিড করলে আদালত তার আইনানুযায়ী পানিশমেন্টের (শাস্তি) ব্যবস্থা করবেন। এখন প্রশাসন নিয়োগ দিলে সেটি আদালতে নির্দেশ অমান্য করা হবে। আমরা মামলার রায়ের দিন বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করব।’

মামলার বাদী অধ্যাপক আলী আসগর জানান, রুল জারির তিন মাস না যেতে ফের শিক্ষক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে প্ল্যানিং কমিটিকে চিঠি না দিয়ে পরপর তিনটি প্ল্যানিং কমিটির সভা দেখানো হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন না এমন প্ল্যানিং কমিটির দুই শিক্ষককে উপস্থিত দেখানো হয়। পরবর্তীতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যানিং কমিটির তিনজন সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন তাদের আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি। বিভাগে কোনো ধরনের প্ল্যানিং কমিটির মিটিং হয়নি।

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিভাগে দীর্ঘ দিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। শিক্ষক ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি তিনবার প্ল্যানিং কমিটির সভা ডেকেছি। কিন্তু কেউ উপস্থিত না হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

মিটিংয়ে না থেকেও উপস্থিতির বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ভুলক্রমে ওই শিক্ষকদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছিল।

অধ্যাপক আলী আসগর অভিযোগ করেন, মামলার রায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিপরীতে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রশাসন রায়ের আগে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল মাস্টার্স পাস শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই মাস পর মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়েছে এমন শিক্ষার্থীকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভাইভা বোর্ডেও তাঁকে ডাকা হয়েছে।

মামলা চলাকালে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী ও উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।