ইডেনে বৈধ সিট না ছাড়ায় নির্যাতন, ধর্ষণের হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর!

ইডেন মহিলা কলেজের আবাসিক হলের কক্ষে বৈধ শিক্ষার্থীকে বের করে দিয়ে অবৈধ শিক্ষার্থীকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। এতে বাধা দেওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী।
গত রোববার ওই নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর বহিষ্কার দাবিতে কলেজ অধ্যক্ষকে এই অভিযোগ দিয়েছে ইডেন কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাসের প্রায় ৯৬ জন শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেত্রী হলেন নুজহাত ফারিয়া রোকসানা। তিনি ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
বঙ্গমাতা ছাত্রী নিবাসের একাধিক ছাত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত শনিবার রাতে রোকসানা আমাদের কক্ষে এসে অবৈধভাবে এক ছাত্রীকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এসময় আমরা তাকে বাধা দেই। তিনি আমাদের ওপর নির্যাতন করেন। এসময় ফাবিয়া হক অর্পিতা নামের এক ছাত্রী আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, নুজহাত ফারিয়া রোকসানা আমাদেরকে নির্যাতনের ঘটনা বাইরের কেউ যাতে না জানে, সেজন্য বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। আমরা ছাত্রীনিবাস অথবা কলেজ অধ্যক্ষকে অভিযোগ দিলে তিনি বাইরের ছেলেদের দিয়ে আমাদের ধর্ষণ করানোর হুমকি দেন। এর পরের দিন আমরা কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দেই।
কলেজ প্রাধ্যক্ষকে ওই হলের ৯৬ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে নুজহাত ফারিয়া রোকসানা নামের ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। তারা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ১০ এপ্রিল বঙ্গমাতা হলের ৫০৭ নং রুমের ৪নং বেডে তোফা হারুন জেনী এবং ফারিয়া হক অর্পিতা সহ রুমের সকল বৈধ ছাত্রীদের উপর রুম দখল করার উদ্দেশ্যে অকস্মাৎ হামলা করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সদস্য নুজহাত ফারিয়া রোকসানা ও তার মেয়েরা এই হামলা করে। যার ফলে ফারিয়া হক অর্পিতাকে ঐ ছাত্রলীগকর্মী এবং তার মেয়েরা মারধর করে। ফলে সে অসুস্থ হলে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। রুমের বাকিরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে দুজন মাস্টার্স পরীক্ষার্থীও ছিল। শুধু এই ঘটনাই নয় ইতোপূর্বে শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাসে ও ক্যাম্পাসে প্রতিটা সাধারণ ছাত্রীই নিয়মিতভাবে তার উচ্ছৃঙ্খল আচরণে সবসময় ভীত থাকে। হলের বৈধ শিক্ষার্থীরা এখনও আশঙ্কায় আছে, তার আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্রে রোকসানার বিরুদ্ধে প্রায় ১০টি অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবৈধভাবে রুম দখল; শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন; ধর্ষণের হুমকি; অবৈধভাবে বহিরাগত মেয়েদের দিয়ে সিট দখল; অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ; জিনিসপত্র ভাঙচুর; টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি; মেয়েদের জোরপূর্বক রাজনীতিতে জড়ানো; মেয়েদের জোরপূর্বক আপত্তিকর ছবি তোলা এবং লিগ্যাল মেয়েদের সাধারণ অধিকার হরণ।
নির্যাতনের শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রথমে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবগত করেছিলাম। কিন্তু তারা রোকসানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছেও অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য নুজহাত ফারিয়া রোকসানাকে ফোন দিলে তিনি প্রথমে নিজের পরিচয় দেন। পরে এনটিভি অনলাইনের পরিচয় দিলে তিনি বলেন, রোকসানা আপু ওয়াশরুমে গেছেন। বের হলে ফোন দিবেন।
এদিকে, রোকসানা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যর অনুসারী বলে জানা যায়। এ বিষয়ে জানার জন্য লেখককে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে, অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।
এসব বিষয়ে ছাত্রী নিবাসের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুন নাহার বলেন, ছাত্রীদের অভিযোগপত্র পেয়েছি। তারা আমার মাধ্যমে অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছে। রোকসানাকে আমরা ছাত্রী নিবাসে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। জানার সাথে সাথে আমাদের হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সেখানে গিয়েছেন। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা মেয়েদের কাছ থেকে অভিযোগগুলো নিয়েছেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, মেয়েদের মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, সে জন্য একজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি মেয়েদের অভয় দিচ্ছেন। কোনো অন্যায় হলে প্রশাসন তাৎক্ষণিক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।