গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ

Looks like you've blocked notifications!
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে দলগত ধর্ষণের ঘটনায় লাগাতার আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান।

ড. রাজিউর আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুবের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাডেমিক কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যেরা উপস্থিত ছিলেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মুরাদ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। কিন্তু, সোমবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ চলবে।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ছয় আসামি গতকাল রোববার গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আদালতের বিচারক তাঁদের গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ধর্ষণ মামলার ছয় আসামি হলেন শহরতলীর চরমানিকদাহ মিয়াবাড়ি গ্রামের রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), শহরের নবীনবাগ মার্কাস মহল্লার পিয়াস ফকির (২৬), নবীনবাগ এলাকার প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), একই এলাকার মো. নাহিদ রায়হান (২৪), শহরের মার্কাস মহল্লার মো. হেলাল সরদার (২৪) ও পাশের বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার মৌপুড়া গ্রামের তূর্য মোহন্ত (২৬)। তাঁরা নবীনবাগের মিরাজ মিয়ার বাড়িতে ভাড়াবাসায় থাকতেন।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। এর আগে গত শনিবার ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যা বের হেফাজতে থাকা ছয় আসামিকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

অভিযোগ ওঠে, শহরতলীর হেলিপ্যাড থেকে মেসে ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় আসামিরা।

এদিকে ধর্ষকদের প্রতীকী ফাঁসি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, ধর্ষণবিরোধী নাটক, সন্ধ্যায় আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার বশেমুরবিপ্রবিতে চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখপাত্র পিউ মৃধা।

পিউ মৃধা বলেন, ‘আমাদের এক শিক্ষার্থী দলগত ধর্ষণের শিকার হলে বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করি। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতরা হামলা চালায়। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন আহত হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। আমরা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানাই।’

পিউ আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের ওপর থেকে আমরা আস্থা হারিয়েছি। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস পেলে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’ এরপর পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন পিউ।