ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান

Looks like you've blocked notifications!
কেক কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসেসিয়েশনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ছবি : এনটিভি

বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে যে কয়েকটি সূচক রয়েছে তার মধ্যে অ্যালামনাই অন্যতম। আর সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে একথা বলেন উপাচার্য। আর অ্যালামনাইয়ের সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, দ্রুতই সংগঠনের ফান্ড বৃদ্ধিতে কাজ করবেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসেসিয়েশনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক পালন করতেই নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে এই আয়োজন করা হয়। বেলুন উড়িয়ে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাই খুবই গুরুত্ব বহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের ১০০ র‍্যাংকিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে অ্যালামনাই একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

উপাচার্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটি এবং আজীবন সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে অ্যালামনাই নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতির অভাব আছে। এ দেশে ‘অ্যাকাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যালায়েন্স’ এবং ‘অ্যালামনাই নেটওয়ার্কিং’ এই দুটো বিষয়ের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। অ্যাকাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যালায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হয়। সেটির একটি বড় সহায়ক হলো অ্যালামনাই, এই সত্য উপলব্ধি করতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা সবসময় সরকারের বরাদ্দের ওপর নির্ভর করি। কিন্তু বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অ্যালামনাই নেটওয়ার্কিং এবং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে সব মহৎ কিছু অর্জন করে থাকে। সেটি এ দেশে এখনও প্রবেশ করতে সক্ষম হয়নি। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সক্ষম হবে বলে আশা করি। কেননা, এসব প্যারামিটারই বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্ধারণ করে।

সভাপতির বক্তব্যে এ কে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, বিভিন্ন সময়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় ও সামনে এগিয়ে নিতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার পর ৭৩ বছর পার করেছে। এই সময়ে অ্যাসোসিয়েশনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা চেষ্টা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমে এবং অবকাঠামোতে অবদান রাখতে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালামনাইয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালামনাইদের কার্যকলাপ এবং তাদের অবদান প্রত্যক্ষ করেছি। এ ক্ষেত্রে সত্যিই খুব ব্যথিত এবং লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অ্যালামনাই হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, তা আমরা পালন করতে সক্ষম হইনি। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো খরচই সরকারি অনুদান এবং শিক্ষার্থীদের সামান্য বেতনে চলে। সরকারি অনুদানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অ্যালামনাইদেরও অবদান রাখতে হবে।

শিল্পপতি এ কে আজাদ বলেন, অ্যালামনাইয়ের পক্ষ থেকে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে প্রতি বছর তিন কোটি টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তি না দেওয়া হলে অনেক শিক্ষার্থীরই হয়তো লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই আগামী দিনে আমাদের লক্ষ্য হলো অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে ১০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা।

এদিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের গ্রন্থাগার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। এ ছাড়া সেখানে অ্যালামনাইয়ের কার্যনির্বাহী কমিটি এবং আজীবন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। অনলাইনে যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, প্রাক্তন সভাপতি ও মহাসচিব রকীবউদ্দীন আহম্মেদ। এ ছাড়া সশরীরে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জানান অ্যালামনাইয়ের সহসভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান রাশিদুল হাসান এবং সদস্য সেলিমা খাতুন।

সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অ্যালামনাইদের সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্য রক্ষায় বর্তমান প্রজন্মকে আরও আন্তরিক ও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান। উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব সঞ্চালনা করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল হক মুকুল।

এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা গোপ এবং নৃত্য পরিবেশন করেন সামিনা হোসেন প্রেমা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকাইয়া হাসিনা নিলি।