পরীক্ষায় বসতে বাধা নেই জাবির বহিষ্কার হওয়া দুই ছাত্রীর
ছাত্রকে লাঞ্ছনার অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুই ছাত্রীর বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আপিলের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত। ফলে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা ও নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধা থাকছে না তাঁদের।
রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ২৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সড়কে জায়গা ছেড়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীর কলার ধরে চড় মারেন সুমাইয়া বিনতে ইকরাম। এ ঘটনায় সুমাইয়া ও তাঁর সঙ্গে থাকা আনিকার শাস্তির দাবিতে সরব হন অন্য শিক্ষার্থীরা। পরে উভয় পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ করে।
পরের দিন ২৬ জানুয়ারি নৃবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া বিনতে ইকরামকে এক বছরের জন্য এবং আনিকা তাবাসসুম মীমকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ওই দুই শিক্ষার্থী। গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। এ ছাড়া এই বহিষ্কার আদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে আগামী চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন।
সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রিট আবেদনকারীদের নিয়মিত পড়াশোনা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে এবং পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের ফলাফল অপ্রকাশিত রাখা যাবে।
রিটকারীদর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। গত বুধবার (২ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আপিলের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এ বিষয়ে জাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এমন কোনো কোর্ট অর্ডার আমার হাতে এসে পৌঁছেনি।’
‘হাইকোর্টের আদেশের প্রতি আমরা সব সময়ই শ্রদ্ধাশীল’ উল্লেখ করে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘ওই দুই শিক্ষার্থীর ব্যাচের কোনো ক্লাস চলছে না। আগামী ছয় তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তবে ‘আদালতের আদেশ’ উল্লেখ করে সংক্ষুব্ধ ছাত্রীরা আমাদের একটি কপি দিতে এসেছিলেন। সেটা অফিসিয়ালি গ্রহণ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আদালতের আদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে এবং বিভাগকে নির্দেশ দেবে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপিল খারিজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আপিল করতে যাচ্ছেন বলে মৌখিকভাবে জেনেছিলাম। সেই আপিল খারিজ হয়ে থাকলে আইনত ওই দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসতে বাধা থাকছে না। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।’
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।