পাকিস্তানি গণহত্যার বিচার হওয়া জরুরি : ঢাবি ভিসি

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত

একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থাকা জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় তৎকালীন সময়ে যে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল, সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরও বিচার হওয়া জরুরি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ঢাবি উপাচার্য এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনের পাদদেশে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মোমবাতি প্রজ্বালন, শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ২৫ মার্চের কালরাতের বীভৎস ইতিহাসের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা পর্বে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই হলো একমাত্র জেনোসাইড বা গণহত্যা কেন্দ্র। কারণ এই ক্যাম্পাস থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধু মুজিবের আদর্শ বাস্তবায়নের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো তাঁর দেখানো পথে তাঁর চেতনা ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া। যা তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা খুব ভালোভাবেই করছেন।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটি অগ্নিঝড়া মাস। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো স্থাপনা ছিল না, যা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়নি। এই মহান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন ও তার ঠিক চারদিন পরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দুটি ঐতিহাসিক ঘটনাই মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের পতনকে অত্যাসন্ন করেছিল। সেদিন তারা ধর্মের দোহাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ২৫শে মার্চের রাত থেক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এদিন হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। শুধু ঢাকা শহরে নয়, অন্যান্য শহরেও এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। যার কারণে বুদ্ধিজীবীদের বিচার স্থগিত ছিল। রাজাকার, আলবদরদের বিচার আমরা দীর্ঘদিন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে বাংলাদেশকে ১৯৪৭ এর চেতনায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ জাতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু থেকে করা হয়েছে। ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও দুটি জায়গায় হামলা করা হয়েছিল। একটি বিডিআর সদর দপ্তর আর একটি পুলিশের সদর দপ্তর। যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চর্চা করে তাদের জায়গা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গণতান্ত্রিক চর্চা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা যাতে বন্ধ করে দেওয়া যায়, এজন্য এই হামলা করা হয়েছিল।

মাকসুদ কামাল বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে আসল মানুষকে নকল ও নকল মানুষকে আসল করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এই কাজটা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত, জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের প্রেতাত্মারা। ১৯৪৭ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে মাত্র একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমাদের শপথ হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে যেন ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারি।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, এই রাত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শেষ রাত, যারা এই রাত পর্যন্ত এদেশকে শাসন করেছিল। সেই কালরাতে যারা নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিল, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হবে।

এদিকে, রাত ৯টায় জগন্নাথ হলে মোমবাতি প্রজ্বালন করে এক মিনিট নিরবতা পালন ও গণহত্যা স্মরণে দেশপ্রেমিকদের মাগফেরাত কামনায় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হয়।