পায়ে লিখে জেএসসির পর এসএসসিতেও জিপিএ ৫ মানিকের
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। দৈর্ঘ্যে বাম পা ডান পা থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ছোট। তাই চিন্তায় দিশেহারা হয়েছিলেন মানিকের মা-বাবা। সে সমাজের বোঝা হবে, না কাজকর্ম করে খেতে পারবে—তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তারা। তবুও ভালোবেসে তারা তার নাম রাখেন ‘মানিক রহমান’। এরপর মানিককে তাঁরা স্কুলে ভর্তি করেন। অনেক পরিশ্রম করে তাঁরা তাকে স্কুলমুখী করেন।
মানিকের হাত না থাকায় বেঞ্চে বসে লিখতে পারে না, তাই ক্লাসে নিজেদের চকিতে আলাদা বসিয়ে পায়ের আঙুলে কলম বসিয়ে দিতেন মা-বাবা। সেখানে বসে পা দিয়ে খাতায় লিখত সে। পর্যায়ক্রমে পা দিয়েই অন্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতো লিখতে শিখে সে। এভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক স্কুলে যায়। এরপর মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে এবার অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে। ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে। একইভাবে পায়ের আঙুলে কলম বসিয়ে খাতায় লিখে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে সেই মানিক।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অদম্য মেধাবী মানিকের ফলাফল দেখে অবাক হয়েছে এলাকাবাসীসহ দেশের অনেকেই। কিন্তু সে জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছিল।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও রাবাইতারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে।
শারীরিক সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল মানিক। শুধু পা দিয়ে লেখাই নয়, পা দিয়ে মোবাইল ফোন চালানো, কম্পিউটারে টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়েও পারদর্শী। সে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে মানিকের মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘মানিককে নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা ছিলাম। অনেক কষ্ট করে স্কুলমুখী করা হয় তাকে। পরে লেখাপড়ায় বেশ আগ্রহী হয় সে। প্রথম শ্রেণিতে এক রোল হয় তার।’
ওষুধ ব্যবসায়ী মানিকের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় বেশ আগ্রহ ছিল তার। হামাগুড়ি দিয়ে কলম ধরতে ও টেলিভিশনের রিমোট ধরে কার্টুন দেখে মজা পেত। স্কুলের সময়ের আগে গোসল করত। আর ক্লাসের আগে স্কুলে পৌঁছাতে হতো তাকে। প্রতিদিন একই ঘরে রাত ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করত।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও মানিক রহমান অন্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। ভালো ফলাফল করায় আমরা খুশি হয়েছি।’