পেশা যখন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা
দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নিয়োগ দেওয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কর্মী বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করেন একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তা বা এইচআর অফিসার। আসুন জেনে নেই এইচআর অ্যাডমিন পেশা সম্পর্কে কিছু কথা।
মোটামুটি সব প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগের জন্য অন্তত একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তা থাকেন। এই কর্মকর্তার পদটি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের চলাই মুশকিল। বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগ চালু রয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে এই বিভাগটির দক্ষ কর্মীর চাহিদা। তাই পেশা হিসেবে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে বেছে নেওয়া একটি উপযোগী সিদ্ধান্ত।
ক্যারিয়ার গড়তে এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন কেমন হবে তা নির্ভর করে নিজস্ব দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্বের ওপর। ডেস্ক ওয়ার্কে কমফোর্টেবল হলে তাঁর জন্য এই পেশাটি ভালো। এই বিভাগে প্রতিযোগিতা কম, পাশাপাশি চাহিদা ভালো।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে আমরা সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঠিক ব্যবস্থাপনাকে বুঝে থাকি। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে যথাযথ তথ্য উপস্থাপন করাই একজন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীর মূল কাজ। যার ফলে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরতরা প্রতিষ্ঠানের সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের পাত্র হিসেবে বিবেচিত। কর্মী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ, কর্মীদের কার্যপরিধি নির্ধারণ করেন। কর্মীদের বার্ষিক ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসর ভাতা, বেতন, বোনাসের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করেন এই বিভাগের কর্মকর্তারা। কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন এবং তাদের কাজের প্রেরণা সৃষ্টির জন্য দক্ষ কর্মীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি যারা কর্মক্ষেত্রে অবহেলা করে তাদের সঠিক পরামর্শ প্রদানও মানবসম্পদ বিভাগের কাজ।
নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করা, নিয়োগপ্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা, নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, কর্মীদের সমস্যা সমাধান করা, কোন কর্মীকে কোন পদে দিলে ভালো হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া, কর্মীদের ছুটি সংক্রান্ত বিষয় ব্যবস্থাপনা করাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়ভার থাকে এই বিভাগের হাতে।
এ ছাড়া অফিসের কর্মীদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার ব্যাপারে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করে।
একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তাকে বেশ কিছু জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। যেমন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কিত জ্ঞান, নিয়োগ প্রার্থীদের তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারা, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সরিয়ে রেখে প্রতিষ্ঠানের লাভ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রার্থীদের মূল্যায়ন করার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা, ইতিবাচক মনোভাবের দক্ষতা থাকতেই হবে।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি নেওয়া যায়। আবার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ও শর্ট কোর্স করার সুবিধাও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানভেদে ডিগ্রির মেয়াদ ও ধরন আলাদা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
সাধারণত মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে এন্ট্রি লেভেলে চাকরি হয়। এর ঠিক পরের পদটির নাম হিউম্যান রিসোর্স এক্সিকিউটিভ। এই পেশায় যারা নিযুক্ত হতে চান, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ, ধৈর্য্য, সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা এবং দেশের শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কর্মজীবনে একজন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসী হতে হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উন্নয়নে এই বিভাগের গুরুত্ব অপরিমেয়।
লেখক : সহকারী ব্যবস্থাপক, মানবসম্পদ ও প্রশাসন, এনটিভি।