বাকৃবিতে পিএইচডি তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে পিএইচডি ছাত্রের তত্ত্বাবধায়ক হওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ডিসেম্বর মাসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, ২০১৪ সালে অধ্যাপক সাইদুর রহমান অনিয়মের মাধ্যমে নিজের তত্ত্বাবধানে একজন ছাত্রকে ভর্তি করান। দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রকাশ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করেন।

এ অনিয়ম নিয়ে আওয়ামীপন্থি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। পরে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একটি অংশের শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ,  কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত হাজি দানেশ কৃষি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে তিনি  নিজের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ছাত্র ভর্তি করান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক পিএইচডি ছাত্রের তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে এর আগে কমপক্ষে ১০ জন ছাত্রের এমএস (মাস্টার্স) তত্ত্বাবধায়ক হতে হয়। এ ছাড়া ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধের পাশাপাশি ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। নিয়ম অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক হতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা মোট সময়ের অর্ধেক সময় হিসেবে গণ্য হয়। সে নিয়মে সাইদুর রহমানের হাজি মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজের চার বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দুই বছর যোগ হবে। এতে সাইদুর রহমানের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা হয় মোট ১৬ বছর। এ অভিজ্ঞতা যোগ্যতার মানদণ্ডের চেয়ে কম।

শিক্ষকরা আরও বলেন, ২০১৪ সালে সাইদুর রহমান পিএইচডির তত্ত্বাবধায়ক হলেও তিনি নিজে ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পিএইচডির ছাত্র ছিলেন। নিজে পিএইচডির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি নিজের তত্ত্বাবধানে অন্য ছাত্রদের পিএইচডি করিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন,  সাইদুর রহমানের বিষয়টি দুর্নীতি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি অংশ এ অনিয়মকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানান,  অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা এ অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত কমিটির প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে দ্রুতই তদন্ত শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা  গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে, কাজেই আগেভাগে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তখন আপনারা সব জানতে পারবেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছিল। আমি আমার কাগজপত্র উপস্থাপন করার পর তদন্ত কমিটি বলেছে, আমার কোনো অনিয়ম নেই।