তৃতীয় পর্ব - ০৩

বিসিএস প্রিলিমিনারি : দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি

Looks like you've blocked notifications!

সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময়সূচি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যেহেতু আগস্টে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেহেতু আপনি বেশ কয়েক মাস সময় পাচ্ছেন। এই সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোকপাত করেছেন ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ আনিসুর রহমান (সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট)।

৪৩তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৮১৪ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য ৮৪৩ জন, অডিটে ৩৫ জন, তথ্যে ২২ জন, ট্যাক্সে ১৯ জন, কাস্টমসে ১৪ জন ও সমবায়ে ১৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।

১. ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির আগে যেহেতু সময় বেশ হাতে আছে তাহলে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন সলভ করার মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করুন। প্রশ্ন সলভ করার সময় প্রতিটি প্রশ্নে কী তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটা ভালো করে বুঝে পড়বেন। শুধু মুখস্ত করলে প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দিলে ভুল উত্তর দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিগত বছরের প্রশ্ন বা এর আশপাশ থেকেই সাধারণত ৩০-৩৫% প্রশ্ন কমন পড়ে।

২. বিসিএস প্রিলির জন্য সাম্প্রতিক বিষয়বলির চেয়ে ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর জোর দিন বেশি। কারণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন যে, প্রিলিতে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে বড়জোর তিন-চারটি প্রশ্ন আসে। সুতরাং এই নম্বরের জন্য খুব খাটাখাটনি করাটা সময়ের অপচয়। তবে নিয়মিত কিছু সময় পত্রিকা পড়লে এমনিতেই সেগুলো কমন পড়ে যায়।

৩. বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, রাজধানী, পতাকা, রাষ্ট্রপ্রধানের নাম—এ জাতীয় তথ্য খুব বেশি মুখস্ত করে সময় নষ্ট করবেন না। এখান থেকে আসে খুবই কম। তাই কিছু কমন ও গুরুত্বপূর্ণ দেশের তথ্য জেনে নিন। যেমন- পরীক্ষায় যদি হন্ডুরাসের রাজধানী যে তেগুচিগাল্পা আর সুরিনামের রাজধানী যে পারামারিবো এটা যদি আপনি না জানেন, তবে মনে রাখবেন এসব নাম খুব কম সংখ্যক মানুষই জানে। সুতরাং এসব প্রশ্ন নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিয়ে আসুন।

৪. পড়ার সময় এমনভাবে পড়বেন যেন শতভাগ নিশ্চিত হয়েই উত্তর করতে পারেন। এতে আপনার ভুল উত্তর করার আশঙ্কা কমে আসবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৫.  কোনো বিষয়ে খুব গভীরভাবে জানার দরকার হয় না প্রিলির জন্য, সে বিষয়ে আপনার যত আগ্রহই থাকুক না কেন। চেষ্টা করবেন সিলেবাসের সব বিষয়ে কাভার করতে। কেউই সব বিষয়ে সমান পারদর্শী হয় না। তাই, কঠিন টপিক গুলোতে যাতে একটা অ্যাভারেজ প্রস্তুতি যেন থাকে সেটা লক্ষ্য রাখবেন।

৬.  মেইন বই যেগুলো আছে যেমন- বোর্ড বই, লাল নীল দীপাবলি, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সংবিধান ইত্যাদির ওপর জোর দিন বেশি। সহায়ক গাইড বই বাজারের যেকোনোটি ফলো করতে পারেন, তবে মেইন বইগুলোর বিকল্প হিসেবে নয়, সহায়ক হিসেবে।

৭. যাঁরা কোচিং করছেন, কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টের প্রশ্নের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন না। কোচিং বা গাইড বইকে আপনার প্রস্তুতির সহায়ক হিসেবে নিতে পারেন, কিন্তু একমাত্র অবলম্বন করবেন না। আপনি তাদের গাইড হিসেবে ব্যবহার করবেন, কিন্তু তাদের দ্বারা গাইডেড হবেন না। পারলে শুধু নিজে নিজে প্রস্তুতি নিন।

৮. ইংরেজিতে ভালো করতে হলে শব্দভাণ্ডার বাড়াতে হবে। পরীক্ষায় এসব বেশি আসে।

৯. গণিতের জন্য আগে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের সব চ্যাপ্টার মোটামুটিভাবে শেষ করে ফেলুন। কোনটা সিলেবাসে আছে, কোনটা নেই এই হিসাব প্রথমেই করবেন না। এরপর গাইড থেকে অনুশীলন করতে পারেন।

১০.  বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের জন্য প্রথমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন কবি-সাহিত্যিকের তালিকা করে তাঁদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী ভালো করে শেষ করুন।

১১. শেষ কথা, রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে কিংবা ট্যুরে বা যেখানেই যান— চোখ-কান খোলা রাখবেন। যে জায়গায় যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে জেনে যান। যেকোনো সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্থাপত্য, বিখ্যাত ভবন, জায়গা, দেয়ালে লিখা বাণী, নদী, সিনেমা, গান যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করবেন সেটা ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে জেনে নেবেন। কখন কোন তথ্য যে বিসিএস পরীক্ষার কোনো না কোনো ধাপে কাজে লেগে যাবে, সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। একবার প্রিলিতে এমন একটি বিখ্যাত উক্তি এসেছে যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি দেয়ালে লেখা ছিল। একবার গাবতলী দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখলাম বড় করে লেখা বীজ ভবন, বিএডিসি। কয়েকদিন পরে প্রিলি পরীক্ষায় এল- বাংলাদেশের বৃহত্তম বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোনটি? এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা না থাকা সত্ত্বেও ওই বীজ ভবনের সাইনবোর্ডটির কথা মনে থাকায় সঠিক উত্তর করে আসতে পারলাম। সবার জন্য শুভ কামনা রইল। 

আনিসুর রহমান (সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট)