মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন জেলেপল্লির দীপ্তি, পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার

Looks like you've blocked notifications!
মা-বাবার সঙ্গে দীপ্তি রাণী দাস। ছবি : বাসস

দীপ্তি রাণী দাস। রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভার উজিরপুর গ্রামের জেলেপল্লির মৎস্যজীবী ধলু চন্দ্রের বড় মেয়ে তিনি। দারিদ্র্য থামাতে পারিনি দীপ্তি রাণীর স্বপ্নকে। এমবিবিএস কোর্সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে দীপ্তি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। 

আধুনিকতার ছোঁয়াহীন প্রত্যন্ত পল্লিতে বাসরত অভাব-অনটনের মধ্যে তিল-তিল করে নিজের অদম্য ইচ্ছার দিকে এগিয়ে চলছে দীপ্তি। উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাবার ইচ্ছায় প্রাইমারি স্কুল থেকে নিউ ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কেজি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি ও প্রাথমিক সমাপনী সমাপ্তির পর পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৯ সালে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিসহ এসএসসি, ২০২১ সালে সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন দীপ্তি। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পান। এর আগে জেএসসিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলেন দীপ্তি। এবার এমবিবিএস কোর্সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।

বাবা-মা শত কষ্টের মধ্য মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সব সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

দীপ্তি বলেন, ‘ছোটবেলায় স্কুলে যখন জেলেপল্লির বাচ্চাদের সঙ্গে যেতাম, তখন নিজেকে অসহায় মনে হতো। এরপর যখন বাবা আমাকে কেজি স্কুলে ভর্তি করায়, তখন ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলাম। অজপাড়া-গাঁয়ের স্কুল ছেড়ে শহরের কেজি স্কুলে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এমনিতে অভাব-অনটনের কারণে ভালো পোশাক পরতে পারতাম না। ভালো খাবারও জুটতো না। এক সময় সব ভুলে নিজের স্বপ্ন ও বাবা-মায়ের কষ্টের কথা মনে করে নিজেকে তৈরি করতে থাকি।’

স্কুল ও কলেজ থেকে সহযোগিতার প্রশ্নে দীপ্তি জানান, স্কুলে বেতন-প্রাইভেটে কোনো ছাড় মেলেনি। মেধাবী হিসেবে আলাদা করে কোনো সুযোগ-সুবিধাও মেলেনি। যখন কলেজে ভর্তি হন, তখনই করোনার ছুটি পড়ে যায়। সে কারণে ভালো জানা হয়নি কলেজ, চেনা হয়নি শিক্ষক ও সহপাঠীদের।

দীপ্তি বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তির জন্য রেটিনা কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে ১৫/২০ দিন ক্লাস করেছি। বাকি সময় অনলাইনে বাড়ি থেকে ক্লাস করেছি।’

দীপ্তির বাবা ধলু চন্দ্র দাস বলেন, ‘দুই মেয়েসহ চার জনের সংসার। অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে কোনো রকমে দিন চলে যাছে। ধার-দেনা করে দুই মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভগবানের কৃপায় বড় মেয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে। ছোট মেয়েটাও মেধাবী। পীরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বড় মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে ছোট মেয়ের প্রতি যত্ন কম হচ্ছে।’

‘দীপ্তির মেডিকেলে ভর্তিতে খুশির পাশাপাশি দুচিন্তায় পড়েছি। এ পর্যন্ত আসতে অনেক ধার-দেনা হয়েছে। মেয়ের মেডিকেলে পড়ার খরচ কী করে জোগাব, সেটাই এখন ভাবনা’, বলেন ধলু চন্দ্র দাস।