মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম পাবনার মুনমুন
বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। মা গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। এ রকম একটি পরিবার থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাবনার মিশোরী মুনমুন।
মিশোরী মুনমুন বলেন, ‘সন্তানকে পড়াশুনা করাতে একজন মা-বাবাকে কত কষ্ট করতে হয় তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বাবা-মায়ের কষ্ট ঘোচাতে ও তাদের স্বপ্ন পূরণে মানুষের উপকার হবে এমন কাজ করতে চাই আমি।’
মুনমুনদের বাড়ি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার নারায়ণপুরে। তাঁর বাবা মো. আব্দুল কাইয়ুম স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজে শ্রমিকের কাজ করেন। মা মুসলিমা খাতুন গৃহিণী। মুনমুনের বড় বোন চিকিৎসক। তিনি চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মেজো বোন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষে পড়ছেন। পরিবারের সবাই ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। মুনমুনও কঠোর পর্দা করেন। সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল রোববার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন। পাসের হার ৩৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পাস করা ৪৮ হাজার ৯৭৫ জনের মধ্যে সরকারি মেডিকেলের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন চার হাজার ৩৫০ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী দুই হাজার ৩৪১ জন ও ছাত্র দুই হাজার নয়জন। চলমান শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিন হাজার ৯৩৭ জন। আগের শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪১৩ জন।
সূত্র আরও জানায়, এবার মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে মোট এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার আবেদন করেন। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৬ হাজার ৭৯২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনার মেয়ে মিশোরী মুনমুন। তাঁর রোল নম্বর ২৫০০২৩৮। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৮৭.২৫ নম্বর।
মিশোরী মুনমুন গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
মেয়ের সাফল্যে দারুণ খুশি মুনমুনের বাবা মো. আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘আমি সার্থক। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই।’
পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার বলেন, ‘মুনমুন ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তৃতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত সে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়েই পড়াশোনা করে। সব সময় সে ক্লাসে প্রথমস্থান অধিকার করত।’
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, ‘মুনমুনের এই অভাবনীয় সাফল্যে আমরা খুবই গর্ববোধ করছি।’
মুনমুনের সাফল্যে খুশি স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজও। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘মুনমুনের ফলাফলে আমরা সবাই খুশি। তাঁর বাবা ও তাঁর সব বিষয়ে আমরা পাশে থাকতে চাই। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু মহোদয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’