রাবিতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, বাড়ছে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব
সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট, ছাত্র-ছাত্রীদের হল ও শিক্ষকদের আবাসিক এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যাতায়াত নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চারপাশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আবাসিক হলসহ জনবহুল এলাকায় বেড়েছে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং যেসব ড্রেন রয়েছে সেগুলো নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয় না। এতে দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত চলাফেরা করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ শুক্রবার দুপুরের টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে পরিবহন মার্কেট, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে ও ছাত্রীদের আবাসিক হলের এলাকা এবং নবাব আব্দুল লতিফ হল ও সৈয়দ আমীর আলী হলের এলাকায় ‘হাঁটু সমান’ পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি, ক্যাম্পাসের ড্রেনগুলোও পানিতে ডুবে আছে। ফলে, ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা ও যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরসূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর একনেকে ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটের একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়কে ড্রেনেজ সিস্টেমের আওতায় আনতে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে যৌথভাবে এ কাজ পায় মাইশা কনস্ট্রাকশন ও হোসাইন এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। তবে, নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে এ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ক্যাম্পাসসূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের গণরুমে পরপর দুইটি সাপ দেখা গেছে। এর আগে ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল থেকে খৈয়া গোখরা সাপের বাচ্চা, ২৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক ডরমিটরি থেকে দুটি ঘরগিন্নি এবং ১১ আগস্ট আবাসিক এলাকার পূর্বপাড়া কোয়ার্টার থেকে বড় খৈয়া গোখরা সাপ ভীতি ছড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেইক রেসকিউ ফাউন্ডেশন এই তথ্য দাবি করে।
এদিকে, জলাবদ্ধতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখেছেন, ‘...ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধ হয়ে আছি, চারপাশ ডুবে গেছে। আমার বাড়ির চারপাশ, রাস্তা এমনকি, বাড়ির কম্পাউন্ডও ডুবে যাচ্ছে বারবার। পশ্চিম পাড়ার রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরা। কর্দমাক্ত মেঠাপথ যেন! অথচ, আমাদের এ বিপন্নতা কাটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ গত কয়েক মাসে চোখে পড়ছে না।...’
জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ বলেন, ‘প্রায় সময় অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের ভবনের সামনের অংশ তলিয়ে যায়। এই ভবনের আশেপাশের ড্রেনগুলো সংস্কার না করায় একটু বৃষ্টি হলেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছি।’
রাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমা ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোর সামনের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় কোনো কাজে যেতে পারি না। প্রশাসনকে অনেকবার বলা হলেও নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আবাসিক হলে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বাড়ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আশফাক আদি বলেন, ‘কিছু সাংগঠনিক কাজের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময়ই ক্যাম্পাসেই থাকতে হয়। কিন্তু, যখনই ক্যাম্পাসে বৃষ্টি হয় তখনই বেশিরভাগ জায়গা ডুবে থাকে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সাধারণত টুকিটাকি চত্বরে ও পরিবহন মার্কেটের আশেপাশে একাডেমিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাজে জড়ো হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো জলের নিচে তলিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, ‘এটা সত্য যে ক্যাম্পাসের কিছু জায়গা বেশিরভাগই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে, ওই জায়গাগুলো একটু নিচু হওয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা কাভার করতে পারে না। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী প্রথমে আমরা আবাসিক এলাকাকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনব, তারপর একাডেমিক এলাকা। পরে আমরা বাকি এলাকাগুলোকে কাভার করব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে ড্রেনেজ সিস্টেমের নির্মাণ কাজ চলছে। এটি শেষ হলে আশাকরি ক্যাম্পাসের এই জলাবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে।’