শাবিপ্রবি উপাচার্যের বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

Looks like you've blocked notifications!
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিন আজ বুধবার তারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গত সোমবার উপাচার্য ‌তাঁর বক্তব্যে ‌‘সত্যের জয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও এর আগে গত শনিবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর মাসখানেক পর গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ওই দিন তিনি বলেছেন, ‘আমরা অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। আমরা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকব। আজকে সত্য ও ন্যায় বিজয়ী হয়েছে। সত্য টিকে আছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।’

উপাচার্যের সেই বক্তব্য ‘মিথ্যাচার’ ও ‘মনগড়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আজ সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার ও শাহরিয়ার আবেদীন। 

বিবৃতিতে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যের নির্দেশে সংঘটিত পুলিশি হামলার এক মাস ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘এক মাস আগে এই দিনে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্যের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় মারাত্মক আহত হয় অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী।’ তাঁরা বলেন, ‘১৬ জানুয়ারির এক মাস পূর্তিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা বলতে চাই, আমরা কিছুই ভুলিনি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের সব দাবির ব্যাপারেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন সুস্পষ্ট আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন। কিছুদিন আগেই শিক্ষার্থীদের দ্বারা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষিত উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যদি ভেবে থাকেন, তিনি যা ইচ্ছা তা–ই বলতে পারবেন, তবে বিরাট ভুল করছেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের সব দাবির ব্যাপারে খুব শিগগির যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আমরা আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু আমাদের শরীরে লাঠি, বুলেট, বোমার সব আঘাত, জখম, ঝরা রক্ত আমাদের মনে অক্ষয় শক্তির জোগান দিয়ে অঙ্গার হয়ে জ্বলছে। উপাচার্যের পতন না হলে এই অঙ্গার অপ্রতিরোধ্য দাবানলে পরিণত হবে।’

১৬ জানুয়ারির পুলিশি হামলার এক মাস পূর্তিতে শিক্ষার্থীরা আচার্যকে (রাষ্ট্রপতি) অবিলম্বে উপাচার্যের অপসারণ নিশ্চিত করার জন্য আবেদন জানান। একই সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ ও ‘মনগড়া’ বলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।

এর ১৪ দিন পর গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।  এরপর গতকাল শুক্রবার সকালে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে সিলেট পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গত শনিবার সকালে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলমান ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।