শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা ও রাবি শিক্ষার্থীদের আহত করায় প্রশাসনের মামলার আবেদন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এম জি এম শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীদের আহত করার ঘটনায় মামলার আবেদন করেছে প্রশাসন৷ এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও এর আশেপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, ইন্টার্নি, ব্রাদার, আনসার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ আবেদন করা হয়৷
আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলার এই আবেদন করেন৷ রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম জে এম শাহরিয়ার শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার ছাদ হতে নিচে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমতাবস্থায় তাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কোনো প্রকার চিকিৎসা প্রদান না করে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ারকে চিকিৎসার জন্য আইসিইউ-তে না নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রেরণ করেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক ডাকাডাকির পর বিলম্ব করে চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের নিকটে আসে এবং নানা অজুহাতে চিকিৎসা প্রদানে কালক্ষেপণ করতে থাকে। ফলে সেখানেই বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ার মারা যান।’
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘চিকিৎসকেরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে শাহরিয়ারের বাঁচার সম্ভাবনা ছিল বলে ছাত্রদের বিশ্বাস। শাহরিয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুরা রামেক হাসপাতালে পৌঁছায় এবং কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক করুণ শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। সেই সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশেপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক/ইন্টার্নি/নার্স/ব্রাদার/আনসার ও তাদের উচ্ছৃঙ্খল সহযোগিরা ন্যক্কারজনকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে লাঠি ও শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত ধারালো যন্ত্রপাতি দিয়ে হামলা চালায়।’
আবেদনে বলা হয়, ‘এতে আনুমানিক শতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতরভাবে আহত করে। আহত শিক্ষার্থীদের অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র, বরেন্দ্র মেডিকেলসহ রাজশাহীর অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। রাবি শিক্ষার্থীর এমন অবহেলাজনিত মর্মান্তিক মৃত্যু এবং আকস্মিক, অনাকাঙ্খিত অমানবিক ও বর্বরোচিত হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা এজাহারভুক্তকরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়৷’
জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি মামলার আবেদন পেয়েছি৷’
গত বুধবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ার। আহতাবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলেন রাবি শিক্ষার্থীরা৷ পরবর্তীতে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, ওয়ার্ড বয় ও আনসাররা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে৷ এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন৷ এতে রাবির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন৷